ছক বাঁধা চাকরি জীবনে আটকে না থেকে অনেকেই এখন ব্যবসা করার প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। তবে ব্যবসা করতে যেয়ে অনেকেই সফল হচ্ছেন, বেশিরভাগই অসফল রয়ে যাচ্ছেন। এর প্রধান কারণ হচ্ছে সঠিকভাবে বিজনেস মার্কেটিং না করা। অনেকে বুঝেই উঠতে পারেন না কীভাবে এই মার্কেটিং করবেন। ব্যবসার প্রসারের জন্য মার্কেটিং কীভাবে করবেন তারই কয়েকটি উপায় জানাবো আজ।
ব্যবসার প্রসারের জন্য মার্কেটিং যেভাবে করবেন
১) মার্কেট রিসার্চ করুন
মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি ডেভেলপ করার জন্য মার্কেট রিসার্চ করা সবচেয়ে জরুরি। কাস্টমার কীভাবে ভাবছে, কোন কোন স্ট্র্যাটেজি ফলো করলে তারা কিনতে চায়, কোন জায়গায় দোকান হলে সবচেয়ে বেশি বেনিফিট পাওয়া যায় এমন বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে জানা যায় রিসার্চ করলে। এর আরও একটি সুবিধা আছে। যেমন- আপনি ইনিশিয়াল সেলস ফোরকাস্ট সম্পর্কে বুঝতে পারবেন, মার্কেট ট্রেন্ড মনিটর করতে পারবেন এবং আপনার কম্পিটিটররা কে কী করছে সেদিকে নজর রাখতে পারবেন।
২) টার্গেট মার্কেট সিলেক্ট করুন
আপনি যদি সবার কাছে আপনার প্রোডাক্ট ও সার্ভিস পৌঁছাতে চান, সেটা বেশ ব্যয়বহুল এবং কিছু ক্ষেত্রে অকার্যকরও হতে পারে। কারা আপনার প্রোডাক্টের কাস্টমার হবেন সেটা কিছু বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে আপনি নিজেই নির্ধারণ করতে পারবেন।
এই সেগমেন্টেশন বা গ্রুপটি বোঝার জন্য আপনাকে কিছু ফ্যাক্টর সম্পর্কে আগে জানতে হবে। যেমন-
জিওগ্রাফি
- তারা কোথায় থাকে?
- তারা কোথায় কাজ করে?
ডেমোগ্রাফিক্স
- লিঙ্গ
- বয়স
- শিক্ষা
- পেশা
- আয়
বিহেভিয়ার
- আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ব্যবহার করার প্রাথমিক কারণগুলো কী কী?
- আপনার নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড সম্পর্কে তারা কী জানে?
- আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কতজন ব্যবহার করে?
- তারা কোন জায়গা থেকে আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে জানতে পারে?
লাইফস্টাইল অ্যান্ড ভ্যালু
- তাদের পারিবারিক অবস্থা কেমন?
- বেঁচে থাকার জন্য তারা কী কী করে?
- তাদের শখ ও আগ্রহ কীসে?
- তাদের কি ছেলেমেয়ে আছে?
- তাদের কি পোষা প্রাণী আছে?
আপনার টার্গেট মার্কেট এমন হওয়া উচিত যাদের আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের প্রয়োজন আছে এবং তারা সেগুলো মূল্য দিয়ে কেনে।
৩) ইউনিক সেলিং প্রপোজিশন (USP) চিহ্নিত করুন
USP এমন একটি প্রধান কারণ যার জন্য কাস্টমাররা আপনার কাছ থেকেই কিনবে, আপনার কম্পিটিটরদের থেকে নয়। এটাই আপনার ব্যবসাকে অনেকের মধ্য থেকে আলাদা করে। আপনি অন্যদের চেয়ে কোন কোন কাজ ভিন্নভাবে করছেন সেটা আপনার সম্ভাব্য কাস্টমারদের জানানো প্রয়োজন। এতে বোঝা যায় সে বিষয়ে আপনার কতটুকু জ্ঞান ও দক্ষতা আছে।
আপনার USP অন্যদের চেয়ে একদম ভিন্ন ধরনের হতে পারে। কিছু প্রশ্নের মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন USP ডেভেলপ করতে হবে কিনাঃ
- আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের কোন দিকটি আপনার সবচেয়ে বেশি পছন্দ?
- আপনার কোন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতা সবচেয়ে বেশি?
- আপনার কম্পিটিটরদের কাছে না যেয়ে কাস্টমাররা কেন আপনার কাছে আসবে?
- আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কিনে কাস্টমাররা কীভাবে লাভবান হবে?
- আপনি যখন নতুন কারও কাছে ব্যবসা সম্পর্কে জানাতে চান তখন কোন কোন বিষয়গুলো হাইলাইট করেন?
৪) বিজনেস ব্র্যান্ড ডেভেলপ করুন
প্রতিটি ব্যবসার সাইজ যেমনই হোক না কেন, একটি ব্র্যান্ডের অবশ্যই প্রয়োজন আছে। লোগো, কালার বা ট্যাগ লাইনের চেয়েও একটি ব্র্যান্ড অনেক বড়। একটি প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড তার টার্গেট কাস্টমারদের সাথে ইমোশনালি কানেক্টেড থাকে এবং আপনি কে সেটা তাদের বুঝতে সাহায্য করে। আরও বুঝায়, আপনি কী নিয়ে কাজ করছেন এবং কী কী ডেলিভার করতে পারেন।
৫) মার্কেটিং করার উপায় বের করুন
এখন মার্কেটিং করার প্রচুর অপশন আছে। আপনাকে বুঝতে হবে টার্গেট অডিয়েন্স নির্ধারণ করার জন্য আপনি কোন ধরনের উপায় বেছে নিতে চাচ্ছেন। যে যে অপশন আছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
- একটি বিজনেস ওয়েবসাইট
- সোস্যাল মিডিয়া
- ব্লগিং
- ব্রশিওর
- নেটওয়ার্কিং ইভেন্ট
- প্রিন্ট অ্যাডভার্টাইজিং
- ওয়ার্ড অব মাউথ
৬) গোল ও বাজেট সেট করুন
মার্কেটিং গোল আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে মার্কেটিং অ্যাক্টিভিটিজের মাধ্যমে আপনি কী কী অর্জন করতে চান। আপনার গোল বা লক্ষ্য হতে হবে SMART অর্থাৎ Specific, Measurable, Attainable, Relevant, Time based।
মার্কেটিং অ্যাক্টিভিটিজের জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে। এই বাজেটে যা যা থাকবে-
- ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড মেইনটিনেন্স
- SEO স্ট্র্যাটেজি
- ব্র্যান্ডিং এর ডিজাইন
- প্রমোশনাল ম্যাটারিয়াল (বিজনেস কার্ড, ব্রশিওর ইত্যাদি) এর প্রিন্টিং
- বিজ্ঞাপন
- ডোনেশন ও স্পন্সরশীপ
- মার্কেটিং অ্যাক্টিভিটিজের জন্য স্টাফ নিয়োগ দেয়া
৭) লয়্যাল কাস্টমার ধরে রাখা
আপনার ব্যবসার সফলতা নির্ভর করছে কাস্টমারদের হাতেই। তাই তাদের লয়্যালিটি ধরে রাখতে হবে। কাস্টমারদের ভিন্ন ধরনের সার্ভিস দিলে তারা বারবার আপনার কাছে ফিরে আসবে এবং অন্যদের থেকে আপনাকে আলাদা করবে।
লয়্যাল কাস্টমার ধরে রাখার জন্য যে স্ট্র্যাটেজিগুলো ফলো করতে হবেঃ
- কাস্টমারদের সাথে সোস্যাল মিডিয়া বা ব্লগের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন
- আফটার সেল ফলো আপ প্রোভাইড করুন
- যে প্রমিস করবেন সেটা অবশ্যই পূরণ করুন
- কাস্টমাররা যতটুকু চিন্তা করে তাদেরকে তার চেয়ে বেশি দেয়ার চিন্তা করুন
- সার্ভিস ইমপ্রুভ করার জন্য ফিডব্যাক ও অভিযোগ নিতে শিখুন
- কাস্টমারদের কথা শুনুন
- কাস্টমার সার্ভিস দেয়ার জন্য এবং সেলস প্রসেস চালু রাখার জন্য স্টাফদের ট্রেনিং দিন
৮) মনিটর ও রিভিউ করুন
ব্যবসার প্রসারের জন্য মার্কেটিং অবশ্যই করা যেমন জরুরি, তেমন রেগুলার মনিটর করা ও রিভিউ নেয়াও জরুরি। বিক্রি বাড়ানোর জন্য আরও কী কী করতে হবে সেটা মনিটর করলে তবেই বোঝা যাবে। আপনি যে স্ট্র্যাটেজি নিয়ে কাজ করছেন সেটা আসলেই সফল হচ্ছে কিনা সেটা বোঝার জন্য প্রতি তিন মাস পরপর অবশ্যই রিভিউ করতে হবে। আপনার ব্যবসা যখন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে, তখন নতুন কোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিস চালু করলে, নতুন কোনো কম্পিটিটর মার্কেটে আসলে বা এমন কোনো ইস্যু যদি তৈরি হয় যার কারণে আপনার ইন্ড্রাস্ট্রিতে এফেক্ট পড়তে পারে, এমন হলে তখন অবশ্যই রিভিউ করতে হবে।
রেগুলার বেসিসে (প্রতি মাসে) সেলস ফিগার চেক করা বা কোনো অ্যাডভার্টাইজিং ক্যাম্পেইনে কাস্টমার অ্যাক্টিভিটি মনিটর করা হতে পারে মনিটরিং অ্যাক্টিভিটিজের একটি অংশ। সোস্যাল মিডিয়া বা ওয়েবসাইট ক্যাম্পেইন ইফেক্টিভ হচ্ছে কিনা সেটা বোঝার জন্য ফ্রি অ্যানালিটিক টুলস ব্যবহার করতে পারেন।
সবার কাছে ব্যবসাকে পরিচিত করে তোলার আরও কিছু উপায়
ডিসকাউন্ট দিন
নতুন কাস্টমারদের আগ্রহ তৈরি করার জন্য প্রোডাক্টে অফার দিতে পারেন। আপনাকে রেফার করলে কাস্টমাররা ডিসকাউন্ট পাবে বা ভালো কোনো ডিল থাকলে তারা আরও বেশি আগ্রহী হবে। অন্যদিকে যদি কোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিস শুধু স্যাম্পল বা ট্রায়াল হিসেবে পাওয়া যায়, তাহলে তারাও নিজেদের লয়্যাল কাস্টমার ভাবে। এতে আপনার প্রতি তাদের বিশ্বাস ও ভরসা বাড়ে।
ওয়ার্কশপ বা ওয়েবিনার হোস্ট করতে পারেন
কাউকে কোনো কিছু শেখালে আপনাকে সেই ফিল্ডের অথরিটি হিসেবে মানেন অনেকে। তাই আপনি যা নিয়ে কাজ করছেন সেটা নিয়ে ওয়ার্কশপ হোস্ট করতে পারেন বা অনলাইনে প্রেজেন্টেশন দিতে পারেন। বিশেষ করে যদি আপনার ব্যবসা নির্দিষ্ট কোনো স্কিল বা টেকনিক্যাল ইনফরমেশন রিলেটেড কিছু হয়ে থাকে। আপনার মাধ্যমে কাস্টমাররাও অনেক নতুন কিছু শিখবে। আপনারও আপনার ব্যবসায়িক ইন্ড্রাস্ট্রির সাথে যোগাযোগ বাড়বে এবং ইনফরমেশন কালেক্ট করা সহজ হবে।
ব্যবসার প্রসারের জন্য মার্কেটিং কীভাবে করবেন সে সম্পর্কে আজ জানিয়ে দিলাম বেশ কিছু তথ্য। এখন পর্যন্ত আপনি কোন কোন প্রসেস ফলো করেছেন? এগুলো ফলো করে কি আপনার বিজনেস গ্রো করেছে? যদি তাই হয়, তাহলে আপনিও আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন।