জীবনে কোনো কাজে আসলে কেউই কখনো হারতে চায় না। সবাই সবখানে জিততে চায়। নিত্যদিন মানুষ ছুটে চলেছে তাদের লক্ষ্য পূরণের জন্য। কিন্তু সবাই কি সব কাজে সফল হয়? লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই জীবনের কাছে হেরে যান, সামনে এগিয়ে যেতে ভয় পান। জানি, এটা খুব কষ্টের একটি মুহুর্ত এবং সবাই এই মুহুর্তকে এড়িয়ে চলতে চাই। তবে সত্যিটা হচ্ছে, আপনি যতই চেষ্টা করুন না কেন এই ব্যর্থতার মুহুর্ত এড়িয়ে চলা অসম্ভব। আপনি যতই হেরে যেতে অপছন্দ করুন না কেন, আপনার সফলতার জন্য কখনো না কখনো আপনাকে হারতে হবেই। হার ছাড়া কোনো সফলতার গল্প যে তৈরি হয় না। লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ যখন হয়েই গিয়েছেন, তখন এই পরিস্থিতি থেকে নতুন করে কীভাবে উঠে আসবেন? কীভাবে প্রস্তুত হবেন সামনের দিনের জন্য? চলুন জেনে নেই হারকে সফলতায় পরিণত করার কয়েকটি উপায়।
লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হওয়ার পর সফলতা পাবেন যেভাবে
যে কোনো কাজ করতে গেলে যদি ব্যর্থতা আসে তাহলে মুষড়ে পড়া যাবে না। সফলতা পেতে হলে যে কাজগুলো অবশ্যই করতে হবে-
১) হারকে জীবনের অংশ ভাবুন
কোনো লক্ষ্য পূরণে যখন আপনি ব্যর্থ হয়েছেন, তখন সবার আগে কী করতে হবে জানেন? একে জীবনের একটি অংশ হিসেবেই ভাবতে হবে। হেরে যাওয়া নিয়ে হেনরি ফোর্ড বলেন, ‘আপনি যখন ভাবেন কাজটি আপনাকে দিয়ে হবে অথবা হবে না- আপনার দুটো ভাবনাই সঠিক।’ আপনাকে বুঝতে হবে এটি ভালো বা খারাপ কোনো খবরই নয়, এটা শুধুই একটা খবর।
একবার হেরে গেলে সেটিকে পুরোপুরি হার হিসেবে ধরে নেয়া যাবে না। এখান থেকেই নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করতে হবে এবং বড় হতে হবে। সফল ও অসফল ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে – সফল ব্যক্তিরা যে কোনো কিছুকে পজিটিভ ভাবে দেখে এবং অসফল ব্যক্তিরা সবকিছুতে নেগেটিভ চিন্তা করে।
লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন মানেই যে আপনি হেরে গিয়েছেন এমন নয়। আপনি শুধু তখনই হারবেন যখন আপনি থেমে যাবেন এবং আর এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। মনে রাখবেন, হেরে যাওয়া শুধু একটি ইভেন্ট মাত্র। তাই ব্যর্থ হওয়া নিয়ে আপনার ধারণা বদলান এবং নতুনভাবে শুরু করার চেষ্টা করুন।
২) নতুন কিছু শিখুন
একবার যখন ব্যর্থ হয়েছেন, তখন ভাবুন এই হার থেকে নতুন আর কী কী শিক্ষা নেয়া যায়। এটা সহজ নয়, কিন্তু আপনি যখন আপনার ধারণা বদলাবেন এবং ব্যর্থতাতেও ভালো কিছু দেখবেন তখন পরিস্থিতি বদলাবেই। অধিকাংশ মানুষ ভাবেন ব্যর্থতার উল্টোপিঠেই সফলতা থাকে। কিন্তু এটা মোটেও সঠিক নয়। ব্যর্থতা সফলতার বিপরীত নয়, বরং এটা সফলতার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।
টনি রবিনের এটা নিয়ে খুব সুন্দর একটা ব্যাখ্যা আছে। ‘ভালো বিচারের ফলাফল হচ্ছে সফলতা। ভালো বিচার করা যায় অভিজ্ঞতা থেকে। আর অভিজ্ঞতা আসে সাধারণত ব্যর্থতা থেকে।’ তাই যখন আপনি লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন, তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করুন ‘কেন এমন হলো এবং এখান থেকে আমি কী কী শিখতে পারি?’
সমস্যার প্রতি মনোযোগ না দিয়ে ব্যর্থতা থেকে নতুন কী কী শেখা যায় সেটার প্রতি মনোযোগ দিন। একবার যখন ব্যর্থতাকে শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করবেন তখন এখান থেকেই দেখার দৃষ্টি বদলে যাবে এবং একজন সফল ব্যক্তি হতে আপনাকে আর কেউ আটকাতে পারবে না।
৩) স্বপ্নকে ভুলে যাবেন না
নিজের স্বপ্নকে কখনো ভুলে যাওয়া যাবে না। যখন আপনি নিজেকে লক্ষ্য পূরণের পথে দেখতে পাবেন এবং খুব ভালো একটি লাইফস্টাইল মেনে চলবেন, তখন আপনি নিজেও মোটিভেটেড হবেন। এটা খুব জরুরি কারণ, মানুষ বেশিরভাগ সময়েই হেরে যায় কারণ তারা যা চায় সেটার উপর থেকেই তাদের আগ্রহ চলে যায়।
তারা শুরু থেকেই খুব সুন্দরভাবে সবকিছু শুরু করে, কিন্তু যত দিন যায়, তত তাদের মোটিভেশন কমতে থাকে এবং দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন বিষয়ের কারণে তারা দিশেহারা হয়ে যায়। ফলে লক্ষ্য পূরণে তারা ব্যর্থ হয় এবং কাজ করা বন্ধ করে এবং হাল ছেড়ে দেয়।
৪) নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করুন
নতুন করে আবার একবার ভাবুন তো আপনার আসলে কী কী উদ্দেশ্য ছিল? সেগুলো সব একত্রিত করুন। নতুন উদ্যমে কাজ শুরুর চেষ্টা করুন। উদ্দেশ্য সফলের জন্য কোন কোন কাজগুলো আপনাকে করতে হয়েছে সেগুলো মনে রাখুন। এটা আপনার লাইটহাউজ, যা কিনা আপনাকে সঠিক পথের দিকনির্দেশনা দিবে। আর প্যাশন হচ্ছে ফুয়েল, যা আপনাকে প্রতিদিন নতুন নতুন কাজের জন্য সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তাই সবার আগে উদ্দেশ্য খুঁজে বের করুন। কেন আপনি লক্ষ্য পূরণ করতে চান? কেন আপনার স্বপ্ন পূরণ করা প্রয়োজন? আপনার উদ্দেশ্য যত শক্তিশালী ও ইমোশনাল হবে, তত মোটিভেশন শক্তিশালী হবে।
৫) পরিকল্পনা করে এগিয়ে যান
একবার যখন প্যাশনকে একত্রিত করতে পেরেছেন, এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যান এবং ধীরে ধীরে পদক্ষেপ বাড়ান। এখন আপনি বুঝতে পারবেন কেন আপনি এর আগে ব্যর্থ হয়েছিলেন। হয়তো আপনি পর্যাপ্ত পরিশ্রম করেননি। হয়তো আপনার কাজ করার ধরন সঠিক ছিল না। অথবা আপনার হয়তো আরও একবার চেষ্টা করা উচিত ছিল।
যাই করুন না কেন, আরও একবার নতুন পরিকল্পনা করুন এবং নতুনভাবে শুরু করুন। পরিকল্পনা করাকে কখনো ছোট করে দেখবেন না। ল্যারি উইংগেট এর মতে, ‘কেউ কখনো ভেঙে পড়বে, অলস হবে বা বোকা হবে এসব কারণে প্ল্যান তৈরি করে না। এগুলো তখন হয় যখন কোনো প্ল্যান থাকে না।’ আপনার প্ল্যানই আপনাকে বলবে আপনার লক্ষ্য পূরণের জন্য আপনাকে কী কী করতে হবে। তবে যাই প্ল্যান করুন না কেন, অবশ্যই সেটিকে কাজে পরিণত করতে হবে।
৬) কাজ শুরু করেই নতুন রূপে ফিরুন
সব শেষে যেটাই ভেবেছেন সেটাকে কাজে পরিণত করুন। এখন আপনার কাছে দুটো অপশন আছে। একটি হচ্ছে, আপনি শুধু বসে থাকুন এবং কিছুই করবেন না। এটি আপনাকে কখনোই কোথাও নিয়ে যাবে না। আপনি যদি কোনো খাদে পড়ে যান এবং নিজেকে বাঁচানোর কোনো চেষ্টা না করেন তাহলে কখনোই সেখান থেকে বের হতে পারবেন না। আপনার নিজের উন্নতি করতে হলে ২য় কাজটিই আপনাকে করতে হবে। আর তা হচ্ছেঃ কাজ শুরু করা।
আপনি যদি সঠিক ট্র্যাকেও থাকেন এবং বসে পড়েন তাহলে সেখানেই আপনি থেমে যাবেন। জানেন মানুষ কেন পানিতে ডুবে যায়? কারণ সে এক জায়গাতেই থাকে। আর এজন্য এগিয়ে চলা খুব জরুরি। আর তাই তো প্ল্যান অনুযায়ী সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নিয়মিত কাজ করে যাওয়া জরুরি।
৭) ভালো অভ্যাস তৈরি করুন
সফলতার চাবি লুকিয়ে আছে অধ্যাবসায়ের মধ্যে। যে কোনো নতুন অভ্যাস বা প্রজেক্ট আমরা তৈরি করি খুব ভালো কিছু উদ্দেশ্য নিয়ে। কিন্তু মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই হাল ছেড়ে দেই। তাহলে কীভাবে এই কাজগুলোকে গতিশীল রাখা যায়? উত্তর হচ্ছে ভালো অভ্যাসের মাধ্যমে। জিমে যেয়ে ব্যায়াম করা হোক বা নতুন ভাষা শেখা হোক, একটি নির্দিষ্ট সময় আলাদা রাখুন নিজের লক্ষ্য পূরণের জন্য। আপনি যতই আনপ্রোডাক্টিভ বা আনমোটিভেটেড হন না কেন, নিশ্চিত করুন যে একটি রুটিন আপনি অবশ্যই মেনে চলছেন।
লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলে মনোবল হারিয়ে যায় খুব সহজেই। কিন্তু এই লক্ষ্য অর্জনে কী কী করা যায় সেটা খুঁজে বের করতে হবে আপনাকেই। থমাস এডিসনের নাম তো আপনারা জানেন, তাই না? তার ব্যর্থতার হাজারও গল্প আছে। তাই বলে কি তিনি থেমে গিয়েছেন? তিনি তার অসফলতাগুলোকেই সফলতার সিঁড়ি হিসেবে তৈরি করেছেন। তাই তো আজ ইতিহাসের পাতায় তার নাম লেখা আছে। আপনিও যদি জীবনে সফল হতে চান তাহলে আপনাকেও জীবনের প্রতিটি অধ্যায় পার করতে হবে এবং বাউন্স ব্যাক করে ফিরতেই হবে।
ছবিঃ সংগৃহীত