প্রফেশনাল রেজ্যুমে তৈরিতে যে ৩০টি স্কিলের কথা অবশ্যই লিখবেন

একটা রেজ্যুমে লেখার জন্য অনেক ইনফরমেশন দরকার হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে বেস্ট স্কিলগুলো সম্পর্কে লেখা। কিন্তু প্রফেশনাল রেজ্যুমেতে আসলে কী কী স্কিলের কথা বলা হয়ে থাকে? চাকরিপ্রার্থীদের কাছে চাকরিদাতারা কী কী স্কিল আশা করেন? জব মার্কেটে এখন স্কিলড প্রফেশনালদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। সবার মধ্যে থেকে আপনার রেজ্যুমে আলাদা করা তাই কিছুটা কঠিন তো বটেই। আপনার রেজ্যুমে যে স্কিলগুলোর কথা বলা থাকবে সেগুলোই ঠিক করবে আপনাকে হায়ারিং ম্যানেজার নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিবেন কিনা। তাই রিজ্যুমে কীভাবে সাজালে আপনার ডাক আসতে পারে সেটা আগে থেকেই ঠিক করতে হবে। আজ জানাবো প্রফেশনাল রিজ্যুমে যে স্কিলগুলোর কথা অবশ্যই বলবেন সেগুলো সম্পর্কে।

প্রফেশনাল রিজ্যুমে এর জন্য প্রয়োজনীয় স্কিল

যখন রিজ্যুমে তৈরি করা হয়, তখন যে জবে অ্যাপ্লাই করা হচ্ছে সেগুলো রিলেটেড স্কিল থাকা জরুরি। কয়েকটি প্রয়োজনীয় স্কিলের কথা আমি জানাচ্ছি যেগুলো রেজ্যুমেতে উল্লেখ থাকা উচিতঃ

সফট স্কিল

সফট স্কিল বলতে মূলত ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যগুলোই বোঝায়। এগুলোর মধ্যে আছে ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন, কোলাবোরেশন, ও প্রবলেম সলভিং। এগুলো চাকরিদাতাদের কাছে বেশি মূল্যায়িত হয়। কয়েকটি সফট স্কিলের উদাহরণঃ

প্রফেশনাল রেজ্যুমেতে যে সফট স্কিল থাকতে হবে

কমিউনিকেশন স্কিলঃ স্পষ্টতার সাথে ও কার্যকরভাবে তথ্য প্রকাশ করার ক্ষমতা

ক্রিটিক্যাল থিংকিংঃ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তথ্য বিশ্লেষণ এবং মূল্যায়ন করার ক্ষমতা

প্রবলেম সলভিংঃ সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করার দক্ষতা

টাইম ম্যানেজমেন্টঃ কাজকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগানো

লিডারশীপঃ লক্ষ্য অর্জনের জন্য টিমকে সঠিক গাইড করা এবং মোটিভেট করার দক্ষতা

অ্যাডাপটাবিলিটিঃ নতুন পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলা এবং অবস্থার পরিবর্তন করতে পারার ক্ষমতা

টিমওয়ার্কঃ নির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে পুরো টিমের একসাথে হয়ে কাজ করার দক্ষতা

ক্রিয়েটিভিটিঃ আউটসাইড বক্স চিন্তা করার ক্ষমতা এবং ইনোভেটিভ সল্যুশন নিয়ে কাজ করার দক্ষতা

হার্ড স্কিল

হার্ড স্কিল মূলত টেকনিক্যাল বা জব রিলেটেড স্কিল যেগুলো নির্দিষ্ট কাজের জন্য জরুরি হয়ে থাকে। এগুলো শেখা যায় বিভিন্ন এডুকেশন, ট্রেনিং বা ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্সের মাধ্যমে। হার্ড স্কিলের কিছু উদাহরণ হচ্ছেঃ

কম্পিউটার স্কিলঃ সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন, প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ বা অপারেটিং সিস্টেমে দক্ষতা

ডাটা অ্যানালাইসিসঃ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ডাটা অ্যানালাইজ ও ইন্টারপ্রিট করার দক্ষতা

প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টঃ যে কোনো প্রজেক্ট প্ল্যান, অর্গানাইজ ও ইফেক্টিভলি এক্সিকিউট করার দক্ষতা

ভাষাগত দক্ষতাঃ বিভিন্ন ভাষায় কথা বলার দক্ষতা

গ্রাফিক্স ডিজাইনঃ বিভিন্ন ডিজাইন সফটওয়্যার ব্যবহার করা এবং ভিজ্যুয়ালি গ্রাফিক্স করতে পারার দক্ষতা

কাস্টমার সার্ভিসঃ এক্সিলেন্ট কাস্টমার সার্ভিস প্রোভাইড করা এবং কাস্টমারের সমস্যা সমাধান করতে পারার দক্ষতা

সেলস স্কিলঃ অন্যকে প্ররোচিত করে জিনিস কেনানোর ক্ষমতা

টেকনিক্যাল স্কিলসঃ এমন কোনো স্কিল যেগুলো শুধু নির্দিষ্ট কোনো ফিল্ডেরই হয়। যেমন- হেলথকেয়ার প্রফেশনালদের জন্য মেডিকেল স্কিল অথবা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং স্কিল।

হার্ড স্কিল

রেজ্যুমের জন্য ট্রান্সফারেবল স্কিল

ট্রান্সফারেবল স্কিল হচ্ছে সেই স্কিল যেগুলো এক কর্মক্ষেত্রে আপনি শিখতে পারেন এবং অন্য জব বা ক্যারিয়ারে ট্রান্সফার হলেও সেটা ব্যবহার করতে পারেন। এই স্কিলগুলো কোনো নির্দিষ্ট ইন্ড্রাস্ট্রিতে স্পেসিফিক থাকে না এবং যে কোনো রোল বা ফিল্ডেই এটি ভ্যালুয়েবল অ্যাসেট হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। হার্ড ও সফট দুটো স্কিলই এর মাঝে রয়েছে। চলুন দেখে নেয়া যাক কোন ট্রান্সফারেবল স্কিলগুলো রেজ্যুমেতে অ্যাড করতে পারেনঃ

কমিউনিকেশন স্কিলঃ ভারবালি ও রাইটিং যে কোনো ভাবেই সব ধরনের ইনফরমেশন ক্লিয়ারলি ও ইফেক্টিভলি দেয়ার দক্ষতা

লিডারশীপ স্কিলঃ লক্ষ্য অর্জনের জন্য টিমকে সঠিকভাবে গাইড ও মোটিভেট করা

প্রবলেম সলভিং স্কিলঃ যথার্থভাবে যে কোনো সমস্যা বিশ্লেষণ করা এবং সমস্যার সমাধান করার দক্ষতা

অ্যাডাপটাবিলিটিঃ নতুন পরিবেশে নতুন মানুষদের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়া এবং পরিস্থিতি বদলানোর সাহস থাকা

টিমওয়ার্ক স্কিলঃ যে কোনো দায়িত্ব টিমের সবার মাঝে সমানভাবে ভাগ করে দেয়া এবং লক্ষ্য অর্জনে সবাইকে নিয়ে কাজ করা

টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিলঃ যে কোনো কাজ অর্গানাইজ করা এবং সময়ের মধ্যে সেগুলো সম্পন্ন করার দক্ষতা

ক্রিটিক্যাল থিংকিং স্কিলঃ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তথ্য মূল্যায়ন করার দক্ষতা

ক্রিয়েটিভিটিঃ আউটসাইড বক্স চিন্তা করার দক্ষতা থাকা এবং ইনোভেটিভ সল্যুশন নিয়ে কাজ করা

অর্গানাইজেশনাল স্কিলঃ যে কোনো কাজ অর্গানাইজ ও ম্যানেজ করা, রিসোর্স সম্পর্কে জানা এবং সব তথ্য সঠিকভাবে সংগ্রহ করা

ইন্টারপারসোনাল স্কিলঃ অন্যের সাথে পজিটিভ রিলেশনশীপ তৈরি করা ও মেইনটেইন করা

মনোযোগ দিয়ে শোনাঃ যে কোনো আলোচনা গভীর মনযোগ দিয়ে শোনা এবং নির্ভুলভাবে কাজ করার নিশ্চয়তা দেয়া

প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট স্কিলঃ যে কোনো প্রজেক্ট ইফেক্টিভলি করার জন্য প্ল্যান, অর্গানাইজ ও এক্সিকিউট করা

রিসার্চ স্কিলঃ বিভিন্ন সোর্স থেকে নানা তথ্য সংগ্রহ করা এবং সেগুলো পর্যালোচনা করার দক্ষতা

রিজ্যুমে স্কিল লিস্ট করার উপায়

স্কিল শুধু জানলেই হবে না, সেগুলো যেন নিয়োগকর্তার নজরে আসে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। নইলে তারা কীভাবে বুঝবেন আপনি কোন কোন বিষয়ে দক্ষ? এজন্য রিজ্যুমেতে স্কিল লিস্ট করা জরুরি। চলুন জেনে নেয়া যাক কীভাবে এটি করা যায়।

skill in resume

ডেডিকেটেড একটি স্কিল সেকশন ক্রিয়েট করুন

রিজ্যুমেতে একটি সেপারেট সেকশন ইনক্লুড করুন যেখানে স্পেসিফিকভাবে স্কিলগুলো হাইলাইট করা থাকবে। এই সেকশনের মাধ্যমে বোঝা যাবে আপনি যে যে কাজ করেছেন সেগুলোর সাথে বর্তমান কাজটি প্রাসঙ্গিক কিনা।

টেকনিক্যাল ও ওয়ার্কপ্লেস স্কিল ইনক্লুড করুন

স্কিল সেকশনে টেকনিক্যাল স্কিল (স্পেসিফিক যে সফটওয়্যার বা টুলস ব্যবহারে আপনি দক্ষ) এবং ওয়ার্কপ্লেস স্কিল (কীভাবে কাজের জন্য অ্যাপ্রোচ করবেন এবং আপনি নিজে কেমন টিম মেম্বার) দুটো সম্পর্কেই লিখুন।

কাজ হাইলাইট করুন

জব ডেসক্রিপশনে কাজ নিয়ে যে রিকোয়ারমেন্ট ও কোয়ালিফিকেশনের কথা বলা হয়েছে সেগুলো স্কিল সেকশনে কাস্টমাইজ করে লিখুন। চাকরিদাতা কোন কোন স্কিলের কথা বলেছেন সেগুলো চিহ্নিত করুন এবং অবশ্যই সেগুলো হাইলাইট করুন।

দক্ষতা পরিমাপ করুন

যখনই সম্ভব হয়, আগের কর্মক্ষেত্রে আপনি কীভাবে কাজ করেছেন সেগুলো নিয়ে নির্দিষ্ট কিছু এক্সামপল বা অ্যাচিভমেন্টের কথা জানান। এতে চাকরিদাতাও বুঝতে পারবেন আপনি তাদের অর্গানাইজেশনের জন্য কতটুকু বেনিফিট দিতে পারবেন।

অ্যাকশন ভার্ব ইউজ করুন

স্কিল যখন বর্ণনা করবেন, তখন অবশ্যই দক্ষতা ও অর্জন বোঝাতে স্ট্রং অ্যাকশন ভার্ব ইউজ করুন। এতে আপনার স্কিল পাঠকের কাছে আরও অনেক বেশি ইম্প্যাক্টফুল ও এংগেজিং মনে হবে।

প্রার্থী হিসেবে আপনি যদি শুধু রিজ্যুমে নিয়ে যান তাহলে যে চাকরি পাবেন তার কোনো গ্যারান্টি নেই। চাকরি পাওয়ার জন্য এমন সিচুয়েশন তৈরি করতে হবে যেন চাকরিদাতা নিজেই আপনার প্রতি ইমপ্রেসড হন। আর এজন্য অবশ্যই প্রফেশনা রিজ্যুমে বানাতে হবে। আশা করি আর্টিকেলটি হেল্পফুল ছিল। এবার আপনিও জানেন কোন কোন স্কিল আপনাকে রিজ্যুমেতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাহলে আর দেরি কীসের? তৈরি করে ফেলুন আপনার প্রফেশনাল রিজ্যুমে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *