বর্তমান যুগে নিজে কিছু শুরু করা হোক বা বাড়তি কিছু ইনকাম করা হোক, সবাই চায় নিজের কোনো ব্যবসা থাকুক। কিন্তু ব্যবসা করার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন, সেটা কি সবার থাকে? আর থাকে না বলেই, অনেকেই শুরু করতে যেয়ে মাঝপথে থেমে যান। নিজের বলতে আর কিছুই শুরু করা হয় না। তবে মন খারাপ করার কিছু নেই। এখন আপনিও চাইলে ব্যবসা করতে পারবেন। কোনো ধরনের ইনভেস্টমেন্ট ছাড়াই প্রফিটেবল কয়েকটি বিজনেসের আইডিয়া সম্পর্কে আজ জানাবো আপনাদের। এগুলোর ভেতর যেটা আপনার ভালো লাগে সেটা নিয়েই কাজ শুরু করতে পারবেন। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
ইনভেস্টমেন্ট ছাড়াই প্রফিটেবল বিজনেসের আইডিয়া
ইন্টারনেটের এই যুগে সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে যে কেউই এখন বিজনেস শুরু করতে পারে খুব অল্প টাকা দিয়ে বা ইনভেস্টমেন্ট ছাড়াই। ব্যবসা করা খুব কঠিন বলে আগে যারা ভাবত সেই দিন এখন আর নেই। আপনি যদি একজন হাউজওয়াইফ, ফুল টাইম চাকুরীজীবী, স্টুডেন্ট হন অথবা এমন কেউ যিনি কিনা চাকরীর পাশাপাশি বাড়তি ইনকাম করতে চাচ্ছেন, তাহলে এই বিজনেস আইডিয়াগুলো সহজেই কাজে লাগাতে পারেন। কী সেই আইডিয়াগুলো? চলুন জেনে নেয়া যাক-
১) ব্লগ
এমন অনেককেই দেখবেন যারা ব্লগের মাধ্যমে নিজেদের চিন্তাভাবনা ও বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করে ফুল টাইম ইনকাম করছে। আপনিও যদি এই প্রফেশনে সাকসেসফুল হতে চান, তাহলে আগে ঠিক করুন কোন বিষয়ে আপনার আগ্রহ আছে। এরপর সাবজেক্ট অনুযায়ী টার্গেট মার্কেট সেট করুন। টপিক যে কোনো কিছু হতে পারে। তবে লোকেদের আগ্রহ আছে এমন টপিক বেছে নেয়াটাই ভালো।
ব্লগের টপিক হতে পারে-
- ট্রাভেল
- ফুড
- প্রোডাক্ট রিভিউ
- হেলথ
- বিউটি স্পোর্টস
- গার্ডেনিং
- বুক রিভিউ
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, অ্যাডভার্তাইজমেন্ট (গুগল অ্যাডসেন্স), রিভিউয়িং ও প্রোডাক্ট সেলিং এর মাধ্যমে আপনি অর্থ আয় করতে পারেন। ইনভেস্টমেন্ট ছাড়াই প্রফিটেবল বিজনেসের মধ্যে এটা অন্যতম।
২) অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বেশ পপুলার একটি মেথড যার মাধ্যমে অন্য কোম্পানির ও ওয়েবসাইটের প্রোডাক্ট ও সার্ভিস প্রমোট করা হয়। প্রতিটি বিক্রির জন্য আপনি কমিশন পাবেন। ইন্টারনেটে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং খুব সহজ ও প্রফিটেবল একটি বিজনেস। কারণ এই মার্কেটিং এ আপনার নিজের পণ্যের প্রয়োজন নেই বরং মার্চেন্টের প্রোডাক্ট বিক্রি করে আপনি অর্থ আয় করতে পারবেন।
আপনার যদি নিজের একটি ওয়েবসাইট থাকে তাহলে আপনি বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া যেমন- ফেইসবুক, ইউটিউব, পিন্টারেস্টের মাধ্যমে আপনার প্রোডাক্টের প্রমোশন করতে পারবেন।
৩) ইউটিউব
ইউটিউব বর্তমানে অর্থ আয় করার জন্য বেশ জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে, যেটা মূলত শুরু করা যায় কোনো ধরনের ইনভেস্টমেন্ট ছাড়াই। বর্তমানে হাজার হাজার ইউটিউবাররা ইউটিউবে ফ্রি ভিডিও আপলোডের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আয় করছে। তবে হ্যাঁ, এটাও সত্যি যে টাকা আয় করার পাশাপাশি সফল ইউটিউবার হওয়ার ট্রিকসটাও আপনাকে জানতে হবে।
৪) ড্রপশিপিং বিজনেস
নিজে ম্যানুফাকচার না করে যদি অনলাইনে প্রোডাক্ট বিক্রি করতে চান, তাহলে ড্রপশিপিং খুব ভালো একটি অপশন। সাথে হয়ত খুব অল্প পরিমাণে ইনভেস্টমেন্ট করতে হতে পারে। আপনার শুধু একজন সাপ্লায়ার খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদের কাছ থেকে প্রোডাক্ট সোর্স নিতে হবে। আপনাকে এ জন্য কোনো ওয়্যারহাউজ মেনটেইন করতে হবে না, যেহেতু কোনো পণ্য স্টক করতে হচ্ছে না এই বিজনেসে।
৫) বেবি সিটিং
আপনি কি বাচ্চা পছন্দ করেন? তাদের সাথে সময় কাটাতে ভালোবাসেন? তাহলে সহজেই শুরু করে দিতে পারেন বেবিসিটিং বিজনেস। বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে সন্তানের খেয়াল রাখাটাই বেবিসিটিং। হোম বেইজড এই বিজনেসটি আপনাকে বেশ ক্লায়েন্ট এনে দিতে পারে।
৬) বিজনেস স্টার্টআপ ইন্সট্রাকশন
বিজনেস স্টার্টআপ ইন্সট্রাকশন হচ্ছে অন্যতম প্রফিটেবল ও ট্রেন্ডিং হোম বিজনেস যেটা আপনি শুরু করতে পারেন ইনভেস্টমেন্ট ছাড়াই। যদি ব্যবসাতে আপনার কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থাকে এবং এই ইন্ড্রাস্ট্রি সম্পর্কে আইডিয়া থাকে তাহলে ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন অল্প সময়েই। এই ব্যবসাতে আপনি আপনার নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা সম্পর্কে অন্যদের জানাবেন ও শেখাবেন।
৭) কনসাল্টিং
আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন, তাহলে নিজ থেকেই হোক বা কোনো কোম্পানির সাথে- কনসাল্টিং শুরু করতে পারেন। প্যাশন ও নলেজ থাকলেই এটি আপনি শুরু করতে পারবেন।
৮) কন্টেন্ট রাইটিং
স্টার্ট আপ শুরু করার জন্য বর্তমানে ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট বা কপিরাইটিং বেশ প্রফিটেবল একটি বিজনেস। আপনার যদি লেখালেখির হাত ভালো থাকে এবং গ্রামাটিক্যালি জানেন ভালো, তাহলে কোনো চিন্তা ছাড়াই এই বিজনেস শুরু করে দিতে পারেন।
৯) ইভেন্ট প্ল্যানিং
আপনি যদি প্রোগ্রাম অর্গানাইজ করতে পছন্দ করেন, তাহলে ইভেন্ট প্ল্যানিং বিজনেস আপনার জন্য হতে পারে বেস্ট একটি আইডিয়া। এই বিজনেস শুরু করতেও আপনার খুব বেশি ইনভেস্টমেন্ট করতে হবে বা। বরং এটি শুরু করাও বেশ সহজ, প্রফিটেবল ও রিওয়ার্ডিং। এই বিজনেস আপনার ক্লায়েন্টের মুখে হাসি ফোটাবে খুব সহজেই।
১০) পুরনো বই বিক্রি করা
বড় কোনো ইনভেস্টমেন্ট ছাড়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে আরও একটি বিজনেস আইডিয়া হচ্ছে পুরনো বই বিক্রি করা। অনেকেই নতুন বইয়ের বদলে সেকেন্ড হ্যান্ড বই কিনতে চান এগুলোর দাম কম বলে। আপনি নিজে কম দামে বই কিনে এনে সেগুলো বেশি দামে অনলাইনে সেল করে দাঁড় করাতে পারেন নিজের একটি বিজনেস।
১১) ই-বুক রাইটিং
আপনি যদি লিখতে পছন্দ করেন এবং কীভাবে ই-বুকে লিখতে হয় সেটাও জানেন তাহলে এটি হতে পারে টাকা ইনকাম করার অন্যতম সহজ একটি পথ। আপনি আপনার বই বিক্রি করতে পারেন আপনার নিজের ওয়েবসাইটে, ব্লগে, এমনকি অ্যামাজনেও।
১২) ইমপ্লয়ি ট্রেনিং
বর্তমানে ইমপ্লয়ি ট্রেনিং এর চাহিদা দিন দিন বেশ বাড়ছে। বিশেষ করে কাস্টমার সার্ভিস, মানি হ্যান্ডেলিং, ওয়ার্কিং প্লেস সেইফটি, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এর মতো ট্রেনিং কোর্সগুলোর চাহিদা। সাধারণত এই কোর্সগুলো ইমপ্লয়ারের সাইট থেকেই পরিচালনা করা হয়। তাই যে কেউ বাড়ি থেকেই বসে এটি অপারেট করতে পারেন।
১৩) ই-টিচিং
ই-টিচিং অথবা অনলাইন টিচিং যাই বলি না কেন, বর্তমানে এই ট্রেন্ডিং এডুকেশনাল বিজনেস বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। পড়াতে ভালোবাসেন এমন যে কেউ এই বিজনেস ঘরে বসে শুরু করতে পারেন দুটি উপায়ে। এক- টিউটরিং মার্কেটপ্লেসে রেজিস্টার করে, দুই- নিজের অনলাইন টিচিং বিজনেস শুরু করে।
১৪) ইন্টারনেট মার্কেটিং
বর্তমানে ছোট হোক বা বড়, সব ব্যবসারই নিজও ওয়েবসাইট আছে। তবে শুধু একটি ওয়েবসাইট থাকলেই সঠিক কাস্টমার পাওয়া যায় না। প্রচুর টেকনিকাল ও ব্র্যান্ডিং ইস্যু আছে যেগুলো যে কোনো ওয়েবসাইটের জন্য ইফেক্টিভ মার্কেটিং টুল হিসেবে কাজ করে। ঠিক এখানেই আপনি কাজ করতে পারেন একজন ইন্টারনেট মার্কেটিং কনসাল্টেন্ট হিসেবে। বড় ধরনের কোনো ইনভেস্টমেন্ট ছাড়াই এটাও বেশ প্রফিটেবল একটি বিজনেস আইডিয়া।
১৫) সোশ্যাল মিডিয়া কনসাল্টিং
বর্তমান সময়ে প্রায় সবাই ফেইসবুক, টুইটার, লিংকড ইন ও পিন্টারেস্ট ব্যবহার করে নিজস্ব ব্যবসার জন্য। বিক্রি বাড়ানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা এখন গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ জন্য এই মিডিয়াগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করাও জানতে হবে। অনেকেই এই ব্যাপারটি বুঝতে পারেন না কীভাবে কী করবেন। আপনি যদি এই ব্যাপারগুলো বুঝতে পারেন তাহলে কাজ করতে পারেন সোশ্যাল মিডিয়া কনসাল্টেন্ট হিসেবে। বর্তমানে ব্যবসায়িক জগতে এটি বেশ প্রফিটেবল একটি আইডিয়া।
১৬) ট্যুর গাইড
ইনভেস্টমেন্ট ছাড়া যদি ব্যবসা শুরু করতে চান, সেক্ষেত্রে ট্যুর গাইড বেশ ভালো একটি অপশন হতে পারে। তবে এজন্য ঐতিহাসিক বিভিন্ন স্থান ও স্থানীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালো জানাশোনা থাকতে হবে। মূলত এই ব্যবসাটি হচ্ছে একটি জায়গা সম্পর্কে মজার ছলে কোনো গ্রুপকে জানানো।
ইনভেস্টমেন্ট ছাড়া কীভাবে ব্যবসা করা যায় এই ভাবনা ভাবতে ভাবতেই আমাদের অনেকের মূল্যবান সময় শেষ হয়ে যায়। উপরে যে আইডিয়াগুলো সম্পর্কে আমি বললাম, সেগুলোই যে শুধু শুরু করা যাবে তা কিন্তু নয়। এগুলো ছাড়াও আরও অনেক আইডিয়া আছে। তবে যেগুলো বেশ সহজ ও আপনার সাধ্যের মধ্যে সেগুলো সম্পর্কেই আমি জানালাম। আশা করি এগুল থেকে কোনো না কোনোটা নিয়ে আপনি কাজ শুরু করতে পারবেন।