সফল হওয়ার জন্য টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিল জানা জরুরি কেন?

আপনার কি কখনো এমন হয়েছে যে একইদিনে অনেকগুলো কাজ করতে হবে অথচ হাতে সময় খুব কম? তাহলে কিছু কিছু মানুষ সব কাজ করার জন্য কীভাবে পর্যাপ্ত সময় পায়? এর রহস্যটা হচ্ছে, আপনার সময়কে কন্ট্রোল করতে হবে, সময় যেন আপনাকে কন্ট্রোল করতে না পারে। সহজ ভাষায় একে বলে টাইম ম্যানেজমেন্ট। সফল হওয়ার জন্য কীভাবে এই স্কিল ইমপ্রুভ করা যায় এবং প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানো যায়, তাই নিয়ে আজ জানাবো আপনাদের।

টাইম ম্যানেজমেন্ট কী?

এটি এমন একটি টেকনিক যার মাধ্যমে আপনি আপনার সময় সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। এর মানে হচ্ছে সঠিক পরিকল্পনা করে এবং গুছিয়ে বিভিন্ন কাজের জন্য কীভাবে সময়কে ভাগ করে নেয়া যায় সেটি নির্ধারণ করা। যদি টাইম ম্যানেজমেন্ট করা আপনি শিখে যান, তাহলে কোনো ধরনের স্ট্রেস ছাড়াই আপনি সব কাজ করে ফেলতে পারবেন। এ জন্য আপনাকে কোন কাজটির গুরুত্ব বেশি এবং কোন কাজটি কিছু সময় পর করলেও চলবে, তার ভেতর পার্থক্য বোঝা জরুরি। এতে আপনি সময় ও এনার্জি দুটোর প্রতিই সমানভাবে গুরুত্ব দিতে পারবেন। প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য আপনাকে স্মার্টভাবে কাজ করতে হবে, কঠিনভাবে নয়।

সফল হওয়ার জন্য এর গুরুত্ব

টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিল খুব জরুরি একটি বিষয়, কেননা এটি আমাদের সময় নষ্ট না করে কীভাবে সঠিকভাবে সময়কে কাজে লাগানো যায় তা বুঝতে সাহায্য করে। এতে আমরা সময় নিয়ে আরও বেশি ফোকাসড থাকি। এর কারণে যে যে সুবিধা পাওয়া যায়ঃ

  • হতাশা ও দুশ্চিন্তা কমে
  • ওয়ার্ক লাইফ ব্যালান্স হয়
  • ফোকাস বাড়ে
  • প্রোডাক্টিভিটি বাড়ে
  • অবসর সময় বেশি পাওয়া যায়
  • কাজকে সহজ করে দেয়
  • অমনোযোগিতা কমায়
  • এনার্জি ও মোটিভেশন বাড়ায়

টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিল

টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিল কোনগুলো?

এই স্কিল তৈরি করার ব্যাপারটা একেকজনের কাছে একেক রকম। তবে এ কথাও সত্যি যে, আপনি যদি স্কিল ডেভেলপ না করেন, তাহলে সঠিকভাবে সময়কেও কাজে লাগাতে পারবেন না। কীভাবে এই স্কিল ডেভেলপ করবেন চলুন জেনে নেয়া যাক-

১) পরিকল্পনা তৈরি করুন

ইফেক্টিভ টাইম ম্যানেজমেন্ট হুট করে একদিনে তৈরি হয় না। এর জন্য সথাযথ পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়। সেই সাথে একটি স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা প্রয়োজন, কাজ গুছিয়ে রাখা, ক্যালেন্ডার ম্যানেজমেন্ট, মিটিং, প্রজেক্ট প্ল্যান ইত্যাদি বিষয় মেইনটেইন করলে দিন বৃথা যাবে না।

২) গুরুত্ব অনুযায়ী টু ডু লিস্ট তৈরি করুন

দিনের শুরুতে চিন্তা করুন কোন কাজগুলো আপনার জন্য করা জরুরি এবং কোনগুলো বেশ কঠিন কাজ। সেই হিসেবে টু ডু লিস্ট তৈরি করুন। গুরুত্ব অনুযায়ী কাজগুলো সাজিয়ে নেয়ার পর সেগুলো কমপ্লিট হয়ে গেলে আরও একবার লিস্ট চেক করুন। এতে যেমন কাজ শেষ করার আনন্দ পাবেন, তেমনই মোটিভেশনও পাবেন।

৩) জলদি শুরু করুন

দিনের পুরোটা সময় ভালোভাবে কাজে লাগানোর জন্য সকাল সকাল দিন শুরু করার চেষ্টা করুন। বেশিরভাগ সফল ব্যক্তিরাই সকালে ঘুম থেকে ওঠেন এবং কাজ শুরু আগে কিছুক্ষণ এক্সারসাইজ করে নেন। আপনি যদি সকাল সকাল দিন শুরু করতে পারেন, তাহলে পুরো দিনে কী কী করবেন তার একটি সুন্দর প্ল্যান করে ফেলতে পারবেন। ভোরবেলা আমাদের মস্তিষ্ক বেশ ঠান্ডা থাকে, ক্রিয়েটিভ কাজ বেশি করা যায়। এর মানে হচ্ছে আপনি নিজেকে আরও প্রোডাক্টিভ করে তুলতে পারবেন।

টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিল

৪) কাজকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিন 

লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে কাজগুলোকে কয়েকটি ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিন। এমনভাবে সেগুলোকে ভাগ করে নিন যেন সেগুলো ম্যানেজ করা সহজ হয়ে যায়। এতে আপনি সামনের পথ আরও পরিষ্কারভাবে দেখতে পাবেন এবং লক্ষ্যে সহজে পৌঁছাতে পারবেন।

৫) সিদ্ধান্ত নেয়া প্র্যাকটিস করুন

দিনে ২৪ ঘন্টায় আমরা কী কী করি, সেটি আসলে টাইম ম্যানেজমেন্টে বিশাল পার্থক্য এনে দেয়। সফল হওয়ার জন্য টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিলের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে সময় অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া। বুঝতে শিখুন এবং সিদ্ধান্ত নিন কোন কাজটি আপনাকে আগে করতে হবে এবং কোন কাজকে না করতে হবে।

৬) কাজ ভাগ করে দিন

সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর জন্য সবার মাঝে কাজ ভাগ করে দেয়াও জরুরি। এটাও আপনাকে ভালোভাবে শিখতে হবে। অন্যকে কাজ বুঝিয়ে দিলে আপনি নিজের জন্যও অনেকটা সময় বের করতে পারবেন এবং টিম মেম্বাররাও নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভাববে এবং ভালো কাজ করতে উৎসাহী হবে। কাজের দায়িত্ব অন্যদের বুঝিয়ে দিতে পারলে আপনি আরও নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে পারবেন। যতটা সম্ভব নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানো আপনার জন্য সহজ হয়ে উঠবে।

দলের মধ্যে কাজ ভাগ করে দেয়া

৭) ডেডলাইন ফলো করুন

কাজ শেষ করার জন্য ডেডলাইন সেট করুন এবং অবশ্যই সে অনুযায়ী কাজ কমপ্লিট করুন। যদি সময়ের আগে কাজ শেষ হয়ে যায় তাহলে নতুন কাজ শুরু করে ফেলতে পারেন।

৮) গড়িমসি করবেন না 

কাজের ক্ষেত্রে গড়িমসি করলে তা অবশ্যই প্রোডাক্টিভিটিতে এফেক্ট ফেলে এবং সময় ও এনার্জি নষ্ট হয়। যখন আমরা বোরড হয়ে যাই তখন Procrastination বা গড়িমসি আমাদের একদম ঘিরে ফেলে। চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোকে ছোট ছোট অ্যাক্টিভিটিজে ভাগ করে ফেলে তাতে এংগেজ থাকা এবং ট্র্যাকে থাকা জরুরি।

৯) বাউন্ডারি সেট করুন এবং না বলুন

সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পদ। সঠিকভাবে টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিল শিখলে সেটি আরও কমফোর্টের জায়গা হয়ে ওঠে যখন আপনি ‘না’ বলতে পারেন। না বলা শিখতে পারলে আরও বিভিন্ন জরুরি কাজে আপনি মনোযোগ দিতে পারবেন। তাই কীভাবে ও কতটুকু নিজেকে বাউন্ডারি দিতে হবে এবং কোথায় থামতে হবে, সে সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝুন।

না বলতে শিখুন

১০) মনোযোগ ধরে রাখুন

নানা কারণে আমাদের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে। যেমন- ই-মেইল, মেসেজ, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি। এসব কারণে আপনার ফোকাস অনেকটাই কমে যেতে পারে এবং আপনি কম প্রডাক্টিভ হতে পারেন। এই বিষয়গুলো থেকে নিজেকে ডিসট্র্যাক্ট রাখুন এবং সময়ের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসুন যেন ওই সময়টুকুতে আপনি আরও বেশি কাজ করতে পারেন।

১১) স্ট্রেস ম্যানেজ করতে শিখুন

স্ট্রেস আপনার প্রোডাক্টিভিটিতে অনেকতাই এফেক্ট ফেলতে পারে। আমরা যখন একতার বেশি কাজ একসাথে করতে যাই তখন ফোকাস হারিয়ে ফেলি এবং স্ট্রেসড হয়ে যাই। যখন আপনি হতাশায় পড়ে যান, তখন কীভাবে কাজ শেষ করবেন তা চিহ্নিত করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তাই স্ট্রেস হ্যান্ডেল করার জন্য ইফেক্টিভ উপায় খুঁজে বের করুন। যেমন- কাজ থেকে কিছুটা বিরতি নিতে পারেন, ব্যায়াম বা মেডিটেশন করতে পারেন, শখের যে কোনো কাজ করতে পারেন, কোনো বন্ধুকে কল দিতে পারেন, গান শুনতে পারেন।

১২) মাল্টিটাস্কিং করবেন না

মাল্টিটাস্কিং মানে হচ্ছে একসাথে অনেক কাজ করা। এতে আসলে প্রোডাক্টিভিটিতে খুব একতা লাভ হয় না। বরং মাল্টিটাস্কিং করা এবং একইসাথে অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন কাজ করলে কাজ সহজে শেষ হয় না এবং মনোযোগও ধরে রাখা যায় না। তাই এক সময়ে একটি কাজ করুন। এতে রেজাল্টও ভালো আসবে এবং আপনিও নিজের উপর থেকে বিশ্বাস হারাবেন না।

মাল্টিটাস্কিং করবেন না

১৩) ২০ মিনিট রুলস ফলো করুন

সফল হওয়ার জন্য টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিলে ‘২০ মিনিট রুল’ ফলো করলে দারুণ রেজাল্ট পাওয়া যায়। ধরুন আপনি একটি কাজ ২০ মিনিটে শেষ করতে চাচ্ছেন। সে অনুযায়ী আপনি এলার্ম সেট করে রাখলেন। সেই সময়ে শুধু একটি কাজেই ফোকাস করলেন এবং এলার্ম বাজার আগেই সেটি শেষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। প্রথমবার যদি শেষ না হয়, তবে একই পদ্ধতি আবার ফলো করুন। দেখবেন এক সময় ঠিকই কাজ সময়ের মধ্যে শেষ করতে পেরেছেন। তখন কিন্তু আপনারই বেশ ভালো লাগবে।

১৪) বিরতি নিন 

কখনো কখনো কাজ থেকে বিরতি নিলে নতুন করে কাজ করার উৎসাহ বাড়ে। তাই ব্রেইনকে আরাম দিতে মাঝে মাঝে বিরতি দিন। এতে কাজে ফোকাস বাড়বে এবং সমস্যা সমাধান করা সহজ হবে।

টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিল জানা কেন জরুরি এবং কীভাবে সেটি করবেন সেটি নিয়ে আপনাদের বেশ কিছু তথ্য জানিয়ে দিলাম। এবার আপনিও এ বিষয়ে সচেতন হোন এবং সফল হওয়ার যাত্রায় শুরু করুন নতুন পথচলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *