কর্মক্ষেত্রে আমরা সবাই এমনভাবে কাজ করি যেন সবাই বোঝে প্রচুর কষ্ট হচ্ছে কাজগুলো করতে। আসলে কি এটা ভালো কোনো উপায় কাজ করার? কাজ করুন, অসুবিধা নেই। তবে খেয়াল রাখুন সেটি যেন স্মার্টভাবে হয়। কাজকে কঠিন না করে স্মার্টভাবে করতে পারলে আপনার প্রোডাক্টিভিটিও বাড়বে, পারফরম্যান্স ভালো হবে, জব স্যাটিসফেকশনও আসবে। এতে আপনি অর্গানাইজেশনের জন্য ভ্যালুয়েবল অ্যাসেট হিসেবে গণ্য হবেন, জব সিকিউরিটি বাড়বে, স্যালারিও বাড়বে। চলুন তাহলে স্মার্টভাবে কাজ করার কিছু স্ট্র্যাটেজি সম্পর্কে জানা যাক।
কাজকে কঠিন না করে স্মার্টভাবে করুন- এর অর্থ কী?
এই কথার অর্থ হচ্ছে আপনি এমনভাবে কাজ করুন যেন আপনার সময় ও এনার্জি দুটোই বাঁচে, আবার কাজটাও ভালোভাবে সম্পন্ন হয়। এটা করার জন্য আপনি বেশকিছু স্ট্র্যাটেজি ফলো ক্রত পারেন, কোন কাজগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটা চিহ্নিত করতে পারেন। স্মার্টভাবে কাজ করলে যে সুবিধাগুলো পাওয়া যায়-
এনার্জি সেভ হয়ঃ চ্যালেঞ্জিং কাজগুলো সহজে করা যায়। সেইসাথে এনার্জি সেভ হয় এবং ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
মোটিভেশন বাড়ায়ঃ কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ায়। নিজেকে মোটিভেট করা যায়, সেই সাথে কলিগদেরও মোটিভেশন দেয়া যায়।
নিজের ভ্যালু বাড়ায়ঃ কোম্পানি সব সময় এমন কাউকে খোঁজে যারা কম এফোর্ট দিয়ে বেশি কাজ করতে পারে। স্মার্টভাবে কাজ করতে পারলে আপনিও এমন একজন হয়ে উঠতে পারবেন। এতে স্যালারিও বাড়বে।
যেভাবে স্মার্টলি কাজ করবেন
১) মর্নিং রুটিন ক্রিয়েট করুন
প্রতিদিনের শুরুটা যে কোনো কাজ দিয়ে একইভাবে করার চেষ্টা করুন। হতে পারে সেটা সকালে ঘুম থেকে কিছু সময় হাঁটা, প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্টের জন্য কোনো বই পড়া। এক্ষেত্রে মেডিটেশন খুব ভালো একটি উপায় হতে পারে। কারণ এটি মনোযোগ ধরে রাখতে, মুড ভালো রাখতে এবং স্ট্রেস কমাতে খুবই হেল্পফুল।
২) টু ডু লিস্ট বেশি বড় রাখবেন না
এক দিনে তিন থেকে পাঁচটির বেশি ইম্পরট্যান্ট ও চ্যালেঞ্জিং টাস্ক রাখবেন না। এগুলোকে এতটা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করুন যেন অবশ্যই সেগুলোকে কমপ্লিট করে ফেলতে পারেন। একটা সময়ে একটা কাজই করুন এবং গুরুত্ব দিয়ে করুন।
৩) ক্লোজিং রুটিন তৈরি করুন
যেভাবে দিনের শুরুটা করেছিলেন, ঠিক সেভাবেই কাজের একটা সমাপ্তি টানার রুটিনও করে ফেলুন। কারণ আজকের দিনের সমাপ্তি সময়মতো হলে পরের দিন নতুন করে শুরু করতে পারবেন। আগেই বলেছি, তিন থেকে পাঁচটির বেশি কাজ একদিনে রাখবেন না। আর কাজ শেষে অবশ্যই ডেস্ক পরিষ্কার করে ফেলবেন এবং যেখানেওকার জিনিস সেখানে রাখবেন।
৪) দ্রুত রেসপন্স করুন
দ্রুততম সময়ে রেসপন্স দেয়ার অভ্যাস তৈরি করুন। আপনি যদি ই-মেইল ওপেন রাখেন তাহলে সেখানে মেইল আসলে দ্রুত রিপ্লাই দিন। তৎক্ষণাৎ রিপ্লাই দিলে লিস্ট থেকে একটা কাজও কমে যায়। যদি কাউকে বলে থাকেন তার সাথে ফ্রি হয়ে কথা বলবেন, চেষ্টা করুন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কথা বলতে।
৫) সময় নয়, কাজের ফলাফল নিয়ে ভাবুন
সারাদিনে কী কী কাজ করলেন সেটার একটা তালিকা করে ফেলুন। এবার দেখুন কোন কাজগুলো ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছেন। এটা আপনাকে মোটিভেটেড রাখতে সাহায্য করবে। এতে আপনি বুঝতে পারবেন কোন কাজগুলো ভালোভাবে হয়েছে এবং পরবর্তীতে আরও কীভাবে কাজ করতে পারবেন সেটা সহজেই বুঝতে পারবেন।
৬) কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ান
কমিউনিকেশন ও কোলাবরেশন স্কিলকে যতটা সম্ভব বাড়ান। যখন কারও সাথে কথা বলছেন তখন তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এছাড়া যখন যে কথা বলছেন, সেই কথাতেই পুরো ফোকাস রাখুন। ধরুন, আপনার কোনো সহকর্মীকে আপনি মেইল পাঠাতে চাচ্ছেন। তখন যে বিষয় নিয়ে কাজ শুধু সেটা সম্পর্কেই মেইল করুন।
৭) মিটিং প্রোডাক্টিভ রাখুন
মিটিং করা অবশ্যই জরুরি। আর যদি মিটিং এ কী নিয়ে কথা বলবেন তার একটা প্ল্যান থাকে, তাহলে সেটা বেশি ইফেক্টিভ হয়। মিটিং এ কোন কোন বিষয় নিয়ে কথা বলবেন সেটার একটা আউটলাইন তৈরি করে ফেলুন এবং যত কম কথায় সেটার আউটকাম বের করে আনা যায় সেই চেষ্টা করুন। তবে হ্যাঁ কথা কম বলা মানে যে অন্যরা কিছু বুঝবে না, এমন যেন না হয়। মিটিং শেষে অবশ্যই সবার ফিডব্যাক নিন।
৮) কাজে বিরতি নিন
কাজে মনোযোগ ধরে রাখার জন্য ৯০ মিনিট বা দুই ঘন্টা পর পর অবশ্যই বিরতি নিন। এতে প্রোডাক্টিভিটি বাড়বে। কাজে বিরতি নেয়া মানে বসে বসে ফোন বা ই-মেইল চেক করা নয়। এ সময়টা শুধু আপনার জন্য। একটু হাঁটাহাঁটি করুন বা কফি খান, কারও সাথে গল্প করুন। শুধু কাজ থেকে বিরতি নয়, স্ক্রিন টাইম থেকেও কিছুটা সময়ের জন্য বিরতি নেয়া জরুরি।
৯) এক সময়ে একটি কাজ করুন
একটি কাজ শেষ না করেই আরেকটি শুরু করা ঠিক নয়। কারণ ব্রেনেরও ফোকাস করার জন্য কিছুটা সময় লাগে। আবার এতে ভুল হওয়ারও চান্স থাকে। তাই এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য যখন যে কাজ করছেন শুধু সেটিতে ফোকাস করুন। একটি কাজ শেষ করে যখন নতুনটি শুরু করবেন তখন কিছুটা ব্রেক নিয়ে নিন। এতে কাজে ফোকাস করা সহজ হবে।
১০) ডেডলাইন সেট করুন
ফোকাস ধরে রাখার জন্য ডেডলাইন সেট করাটা জরুরি। তার চেয়েও জরুরি হচ্ছে কম সময়ে কীভাবে কাজ শেষ করা যাবে সেটা নির্ধারণ করা। এতে কাজের প্রতি এফিসিয়েন্সি বাড়বে, অল্প সময়ে বেশি কাজ করার স্পৃহা বাড়বে। এতে অফিসের অন্য কাজ করার জন্যও আপনি সময় বেশি পাবেন এবং বের হওয়ার আগে অফিস ডেস্ক ক্লিন করে রেখে যেতে পারবেন।
১১) স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট টেকনিক প্র্যাক্টিস করুন
স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট তেকনিক প্র্যাক্টিস করা খুবই জরুরি। যেমন- বই পড়া, মেডিটেশন করা, গান শোনা অথবা ইয়োগা প্র্যাক্টিস করা। এই স্ট্র্যাটেজিগুলো আপনার শারীরিক, ইমোশনাল ও মেন্টাল হেলথে হেল্প করবে। রেগুলার এই কাজগুলো করার কারণে আপনি কাজে আরও বেশি ফোকাস করতে পারবেন এবং ওয়ার্কপ্লেস পারফরম্যান্স ইমপ্রুভ করতে পারবেন।
১২) প্রশ্ন করুন
আপনার যদি কনো কাজকে কঠিন লাগে, তাহলে সেটা কমপ্লিট করার জন্য কারো কাছে সাহায্য চান। সেটা ম্যানেজার বা টিম মেম্বার যে কেউ হতে পারে। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, কাজটি আপনি একা করলে পুরস্কৃত হবেন, তাহলে যত অল্প সময়ের মধ্যে পারেন সল্যুশন খুঁজে বের করুন। আপনার কোনো সহকর্মীও হয়তো সামনে এমন সিচ্যুয়েশনে পড়তে পারে, তখন তাদেরকে এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে মোকাবিলা করতে হয় শিখিয়ে দিন।
১৩) না বলতে শিখুন
আপনার হাতে যদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ থাকে এবং আপনার সহকর্মী অন্য কোনো প্রজেক্ট নিয়ে আপনার কাছে আসে, তাহলে তাকে ভদ্রতার সাথে না বলুন। তাকে বোঝান এই মুহুর্তে আপনার জন্য জরুরি কাজ কোনটি এবং কেন আপনাকে সেটার প্রতি ফোকাস দিতে হবে। কোনোভাবেই রাগ করে বা অভদ্রভাবে তাকে নেগেটিভ কিছু বলা যাবে না। সহকর্মীর সাথে পজিটিভ রিলেশনশীপ রাখতে হলে এই বিষয়গুলো অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
কাজকে কঠিন না ভেবে এবং স্মার্টভাবে কীভাবে কাজ সম্পন্ন করা যায়, সেটি আপনাদের জানিয়ে দিলাম। কর্মক্ষেত্র মানেই সেখানে সবকিছু মনের মতো পাবেন না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনি হাল ছেড়ে দিবেন। কোনো সমস্যা হলে টিম লিডারকে জানান। সার সাথে সমস্যা হয় তার সাথে খোলাখুলি কথা বলুন। যেটা বুঝতে পারছেন না সেটা নিয়ে বার বার প্র্যাক্টিস করুন। অবশ্যই সল্যুশন পেয়ে যাবেন। আর হ্যাঁ, ‘Work Smarter, Not Harder’.