চাকরি না করার ইচ্ছা থেকেই ইদানিং অনেকে ব্যবসার দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু ব্যবসা করতে তো অনেক টাকার প্রয়োজন হয়! তাহলে কি ব্যবসা করবেন না? নাহ এমন কিছু নয়। আপনার যদি পুঁজি কম থাকে অথবা ইনভেস্টমেন্ট নাও করতে পারেন, তাহলেও আপনি ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আজ আপনাদের এমনই কিছু স্মল বিজনেস আইডিয়া সম্পর্কে জানাবো।
স্মল বিজনেস আইডিয়া
১) ফ্রিল্যান্স রাইটিং বিজনেস
অনলাইন বিজনেসের মধ্যে ফ্রিল্যান্স রাইটিং অন্যতম সহজ একটি বিজনেস। এর জন্য আপনার প্রয়োজন শুধু একটি কম্পিউটার ও ইন্টারনেট। এই কাজ করার জন্য যে আপনার সাংবাদিকতায়, সাহিত্যে বা ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনা করতেই হবে এমন নয়। আপনাকে একদম ন্যাটিভ ইংলিশ স্পীকারও হতে হবে না।
আপনি ফ্রিল্যান্স কপিরাইটার বা কন্টেন্ট রাইটার হতে পারেন। ব্লগ, ওয়েব কন্টেন্ট, প্রেস রিলিজ লিখতে পারেন। অনেক কোম্পানি এগুলোর জন্য আলাদাভাবে পেমেন্ট করে। SEO কীভাবে করে শিখে নিন। যে টপিকে আপনি লিখতে কমফোর্টেবল সেটা সম্পর্কে আগে ক্লায়েন্টকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিন। বাড়িতে বসে, ট্রাভেলে, কফিশপে, রেস্টুরেন্টে যেখানে বসে আপনার লিখতে ভালো লাগে সেখানে বসেই আপনি লিখতে পারবেন।
২) কনসাল্টিং
আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে খুব ভালো জানেন অথবা প্যাশনেট হয়ে থাকেন (যেমন- বিজনেস, সোশ্যাল মিডিয়া, মার্কেটিং, হিউম্যান রিসোর্স, লিডারশীপ অথবা কমিউনিকেশন), তাহলে কনসাল্টিং হতে পারে আপনার জন্য বেস্ট একটা অপশন। আপনি নিজেই তাহলে একটি কনসাল্টিং বিজনেস শুরু করতে পারেন, ব্যবসা বড় হলে অন্য কনসাল্টটেন্ডদের নিয়োগ দিতে পারেন।
৩) অনলাইন টিচিং
উদ্যোক্তাদের জন্য অনলাইন টিচিং নতুন এক দুয়ার খুলে দিয়েছে। যেহেতু ক্লাস অনলাইনে নিতে হবে, তাই পছন্দমতো যে কোনো সাওবজেক্ট আপনি চুজ করতে পারেন এবং যে কোনো জায়গায় বসে ক্লাস নিতে পারেন। যদি নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে সেরকম জ্ঞান না থাকে, তাহলে বিদেশি ভাষা হিসেবে ইংরেজিটাই রপ্ত করে শিক্ষার্থীদের শেখাতে পারেন।
৪) পেট সিটিং
বর্তমানে অনেক বাসাতেই পোষা প্রাণী আছে। কেউ হয়তো কুকুর, বিড়াল, পাখি বা খরগোশ পালেন। কিন্তু কোথাও যেতে হলে ওদেরকে সব সময় একা রেখে যাওয়া সম্ভব হয় না। আপনি যদি পেট সিটিং সার্ভিস দেয়া শুরু করেন, তাহলে উভয় পক্ষেরই লাভ। ক্লায়েন্ট তাদের পোষা প্রাণী আপনার কাছে রেখে গেলো। বিনিময় আপনিও কিছু ইনকাম করে নিতে পারলেন। তবে শুধু রাখলেই হবে না, ওদেরকে নিয়মিত খাবার ও পানি দিতে হবে, ওদের সাথে খেলতে হবে, প্রয়োজনে হাঁটতে নিয়ে যেতে হবে। ক্লায়েন্টের স্যাটিসফেকশনের জন্য তাদের নিয়মিত সব তথ্য জানাতে হবে।
৫) অ্যামাজন কিন্ডল পাবলিশিং
লেখালেখি করে টাকা ইনকাম করা যায় না ভাবছেন? এটা একদম ভুল ধারণা! আপনি যদি লিখতে জানেন তাহলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও টাকা আয় করা সম্ভব! কীভাবে? বলছি! এর জন্য অবশ্য পুরো ধন্যবাদটা অ্যামাজন কিন্ডলের পাওনা। ধরুন, আপনি একটা বই লিখেছেন এবং সেটা পলড করেছেন অ্যামাজন কিন্ডলে। অ্যামাজনের রিভিউ টিম বইটা রিভিউ করবে। একবার অ্যাপ্রুভ হয়ে গেলে অ্যামাজনে প্রকাশিত হবে এবং রিডাররা বইটি কিনে পড়তে পারবে। প্রতিবার যখন বইটি বিক্রি হবে, অ্যামাজন তার নিজের একটি অংশ রেখে বাকিটা আপনাকে দিয়ে দিবে। সঠিকভাবে করতে পারলে এটি আপনার জন্য ইনকামের খুব ভালো একটি সোর্স হয়ে উঠতে পারে।
৬) ডে কেয়ার সেন্টার
বাচ্চাদের সাথে আপনার সম্পর্ক খুব ভালো? খুব অল্প সময়ে তাদের সাথে আপনি মিশে যান? তাহলে আপনি ব্যস্ত মায়েদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন খুব সহজেই। শুরু করতে পারেন ডে কেয়ার বিজনেস। এটি শুরু করার জন্য যে আপনাকে অনেক ইনভেস্টমেন্ট করতে হবে মোটেই তা নয়। আপনি নিজের ঘর থেকেও এটি শুরু করতে পারেন। যে সব মায়েদের ম্যাটারনিটি লিভ শেষে অফিসে জয়েন করতে হবে তারা বাচ্চার খাবার ও আনুষঙ্গিক জিনিস আপনাকে দিয়ে যাবে। আর টডলারদের জন্য যা যা প্রয়োজন মায়েরা আপনাকে বুঝিয়ে দিবে। আপনি একা হাতে সামলাতে না পারলে একজন লোকও সাথে রাখতে পারেন। তাহলে বাচ্চাদের খাওয়া, গোসল ও সময় কাটানো নিয়ে ঝক্কি পোহাতে হবে না।
৭) প্রফেশনাল অর্গানাইজিং
এমন কোনো স্মল বিজনেস আইডিয়া খুঁজছেন যেটা সত্যি সত্যি অনেক আনন্দ দিবে? তাহলে ম্যারি কন্ডোর মতো প্রফেশনাল অর্গানাইজার হতে পারেন, যিনি কিনা সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য জিনিস ডিক্লাটার ও মিনিমাইজ করতে হেল্প করেন। মিনিমালিজম বেশ পপুলার একটি কনসেপ্ট হলেও কিছু মানুষের কাছে অনেক আগে থেকে রয়ে যাওয়া জিনিসের কারণে সেগুলো ফেলে দিতে তাদের কষ্ট হয়। একজন প্রফেশনাল অর্গানাইজার হওয়ায় ক্লায়েন্টকে জিনিস কমিয়ে ফেলার এই সিদ্ধান্ত নিতে আপনি সাহায্য করতে পারেন।
আপনি যদি এমন একজন অর্গানাইজড ব্যক্তি হন, যিনি ফাংশনাল ও কমফোর্টেবল স্পেস তৈরি করতে আনন্দ পান, ঠিক একইভাবে আপনি অন্যদের কোচিং করাতে পারেন এই বিষয় নিয়ে। আর এই কাজের জন্য আপনি আলাদাভাবে পেমেন্টও পাবেন। বিজনেসকে প্রমোট করার জন্য ক্লায়েন্টের ঘরের বিফোর ও আফটার ছবি তুলে রাখতে পারেন। এটা আপনি আপনার পোর্টফোলিও হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন যেন অন্যান্য কাস্টমার সেগুলো দেখে আকৃষ্ট হয়।
৮) মেডিকেল কুরিয়ার সার্ভিস
আপনার যদি গাড়ি থাকে এবং টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিল ভালো থাকে, তাহলে নিজস্ব কুরিয়ার সার্ভিস বিশেষ করে মেডিকেল কুরিয়ার সার্ভিস শুরু করতে পারেন। আপনাকে এ জন্য বিভিন্ন জিনিস আনা নেয়ার দায়িত্ব নিতে হতে পারে। যেমন- মেডিকেলের বিভিন্ন আইটেম যেমন ল্যাব স্পেসিমেনস, প্রেসক্রাইব করা ওষুধ ও অন্যান্য জিনিসপত্র। আপনি চাইলে নিজেও শুরু করতে পারেন অথবা ড্রাইভারও রাখতে পারেন।
৯) হোম কেয়ার সার্ভিস
হোম কেয়ার সার্ভিসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এমন অনেক ব্যক্তি আছেন, যাদের নিজেদের বাড়িতেই যত্নের প্রয়োজন হয়। হয়ত একক পরিবারের কারণে অথবা সন্তানরা সবাই বাইরে থাকার কারণে বয়স্ক ব্যক্তিদের একা একা থাকতে হয়। নানা অসুস্থতায় তারা নিজেদের সব কাজ একা একা করতে পারেন না, এমনকি হাসপাতালেও নিজেদের পক্ষে যাওয়া সম্ভব হয় না। আপনি হোম কেয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে এই কাজগুলো করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে হেলথকেয়ারের ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে এমন নয়। আবার এটিকে আপনি ব্যবসা হিসেবেও নিতে পারেন। আপনি চাইলে এই বিজনেসে আরও কিছু সার্ভিস যুক্ত করতে পারেন যেমন- তারা যদি বাসা বদলাতে চায় আপনি তাদের প্যাকিং, ট্রান্সপোর্টিং, সেটিং আপ, ফার্ণিচার স্টোর করাসহ বিভিন্ন সার্ভিস দিলেন। এতে তাদের নিজেদের কিছু করতে হলো না, আবার কাজও হয়ে গেলো।
১০) গার্ডেনিং
ভাবছেন গার্ডেনিং কীভাবে বিজনেস হয়? আপনি যদি গাছ লাগানোর প্রতি প্যাশনেট হন এবং গাছ সম্পর্কে আপনার ভালো জ্ঞান থাকে, তাহলে এই বিজনেস আপনি করতে পারবেন। শুরুটা আপনি বারান্দা বা ছাদ থেকেই করতে পারেন। কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট সিলেক্ট করুন যেগুলো কম বা মাঝারি আলোতেই বেড়ে উঠতে পারবে। ছোট ছোট চারা করে সেগুলো অনলাইনে সেল করতে পারেন। অনলাইনে ছবি দেখেই মানুষ আকৃষ্ট হয়। তাই ছবি তোলাতেও আলাদাভাবে নজর দিতে হবে। সেই সাথে গাছের মিডিয়া যেন ভালো হয়, কোন গাছ কোন মিডিয়াতে ভালো থাকবে, কোন গাছে কেমন আলো লাগবে এসব তথ্য কাস্টমারকে অবশ্যই জানিয়ে দিতে হবে।
১১) ডিজিটাল মার্কেটিং
দিনে দিনে ইন্টারনেটের চাহিদা বেড়েই চলেছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অনলাইন ক্লাটার এবং নিজেদের জন্য প্রোপারলি মার্কেটিং করা। ডিজিটাল মার্কেটিং সার্ভিসের বেশ চাহিদা রয়েছে আগে থেকেই। অনেক ছোট ও মিডসাইজ কোম্পানি অনেক টাকা খরচ করে ইন হাউজ টিম রাখতে চায় না। এর বদলে আউটসোর্স টিম নিয়ে কাজ করতে তারা বেশি আগ্রহী থাকে। আপনি যদি SEO, কন্টেন্ট মার্কেটিং, পে-পার-ক্লিক অ্যাডভার্তাইজিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট অথবা সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে জানেন, তাহলে আপনার নিজেরই সুযোগ রয়েছে বিজনেস ক্রিয়েট করার। আর এই সার্ভিসগুলো আপনি বাড়িতে বসেই দিতে পারবেন।
যে কোনো ব্র্যান্ডের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং খুব জরুরি। আর এ জন্য আপনাকে অবশ্যই ক্লায়েন্ট মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি ডেভেলপ করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আপনি যদি স্ট্রাটেজি তৈরি করতে এবং মার্কেটিং প্ল্যান ইমপ্লিমেন্ট করতে আনন্দ পান, তাহলে ডিজিটাল মার্কেটিং হতে পারে আপনার জন্য পারফেক্ট একটি বিজিনেস। আপনি চাইলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারও হতে পারেন, এটা ডিজিটাল মার্কেটিং এরই একটি অংশ।
আপনারা যারা স্মল বিজনেস আইডিয়া নিয়ে ভাবছিলেন তারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে গিয়েছেন কোন বিজনেসটি আপনার জন্য পারফেক্ট, তাই না? যেটাই চুজ করেন না কেন, সেটা অবশ্যই ভালোভাবে করতে হবে। শুরু করে মাঝপথে ছেড়ে দিলে কখনোই ভালো ফল বয়ে নিয়ে আসবে না। তাই আগে শুরু করুন, এরপর নিয়মিত কাজ করে যান।