কর্মক্ষেত্রে সবাই কোনো না কোনো দলের হয়ে কাজ করে। এখানে কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে কাজের সুযোগ নেই। আপনি যেই ডিপার্টমেন্টেই কাজ করুন না কেন আপনার একজন টিম লিডার পারতপক্ষে থাকবেই। সেই লিডারের সিদ্ধান্তেই দলের অনেক কাজ সম্পন্ন হয়। একটি দলকে সামলে রাখার জন্য লিডারের ভূমিকা অপরিসীম। আপনি যদি নিজে সেই লিডার বা দলনেতা হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি জানেন দলকে সুগঠিত করার জন্য কতটুকু শ্রম আপনাকে দিতে হবে। একটি টিমকে স্ট্রংলি গ্রো করার জন্য এবং কীভাবে সবাই মিলে সমস্যার সমাধান করতে হয় তা শেখানোর জন্য টিম লিডার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো কর্মক্ষেত্রে সাকসেসফুল টিম তৈরির জন্য কী কী স্টেপ আপনারা ফলো করতে পারেন।
কর্মক্ষেত্রে সাকসেসফুল টিম তৈরির জন্য পরামর্শ
১) টিম বিল্ডিং অ্যাক্টিভিটিজ ইমপ্লিমেন্ট করা
আপনি একজন লিডার, অথচ এখনও জানেন না আপনার দলের কোন কর্মী কেমন বা কীভাবে কাজ করতে পছন্দ করে? তাদেরকে জানার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে টিম বিল্ডিং অ্যাক্টিভিটিজ ইমপ্লিমেন্ট করা। এজন্য ম্যানেজাররা স্পেশাল বিভিন্ন ইভেন্ট, অ্যাক্টিভিটিজ বা আইস ব্রেকার কোয়েশ্চেন করতে পারেন কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ বাড়ানোর জন্য। এমন কয়েকটি অ্যাক্টিভিটিজ হচ্ছে-
- টিম লাঞ্চ
- টিম বিল্ডিং গেমস
- কোয়েশ্চেনিয়ারি
- অফিসের পর একসাথে কোথাও বসা
- ইন্টার অফিস গেইমের আয়োজন করা
- কোম্পানি পিকনিক
- হলিডে পার্টি
- ভলান্টিয়ার ডে
২) প্রত্যেককে আইডিয়া শেয়ার করার সুযোগ দেয়া
প্রতিটি টিম মিটিং এ, প্রত্যেক টিম মেম্বারকেই তাদের আইডিয়া শেয়ার করার সুযোগ করে দিন। আপনি কী ভাবছেন সেটা বলার আগে বাকিদেরটা আগে শুনে নিন। প্রত্যেকেই যদি আইডিয়া শেয়ার করার সুযোগ পায়, তাহলে তারাও বুঝতে পারে তাদের আইডিয়ার গুরুত্ব আছে। এতে পরিবেশটাও এমন তৈরি হবে যে সকলেই অংশগ্রহণ করতে চাইবে।
৩) ব্রেইনস্টরমিং সেশন রাখুন
আপনার টিমের সবাই যদি বিভিন্ন আইডিয়া শেয়ার করে থাকে, তবে তাদের মধ্যে কোলাবরেশন আরও বাড়ানোর জন্য ব্রেইনস্টর্ম সেশন রাখুন। প্রতিটি সেশনের আগে, টিমের সবাইকে যে প্রবলেমের সমাধান করতে হবে বা যা নিয়ে আলোচনা হবে, তার কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড ইনফরমেশন দিয়ে রাখবেন। বলে রাখবেন আগে থেকেই কিছু আইডিয়া নিয়ে আসতে যেন সবাই মিলে কাজ শুরু করলে কেউ পিছিয়ে না থাকে।
৪) প্রত্যেকের দায়িত্ব সম্পর্কে সবাইকে জানান
যখনই নতুন কোনো কর্মী দলে যুক্ত হবে তাকে অবশ্যই বাকিদের কাজ সম্পর্কে জানান। খুব ভালো হয় যদি সবার কাজ দিয়ে একটি ডকুমেন্ট তৈরি করে ফেলতে পারেন। এতে সবারই বুঝতে সুবিধা হবে কোন সহকর্মী কী কাজ করছে, কীভাবে করছে। তখন সে নিজেই বুঝতে পারবে কার কাছে কোন সাহায্যের জন্য যেতে হবে।
৫) প্রতিটি মেম্বারের ট্যালেন্ট সম্পর্কে জানুন
কর্মক্ষেত্রে সাকসেসফুল টিম তখনই তৈরি হয়, যখন সবারই আলাদা আলাদা ট্যালেন্ট থাকে এবং সেগুলোকে কাজে লাগানো হয়। সবাইকে সবকিছুতে ভালো করতে হবে এই ধারণা থেকে বের হয়ে এসে যে যেটাতে ভালো করে, তাকে সেটাই করার সুযোগ দিন। যখন কেউ তার নিজ দক্ষতা ও ট্যালেন্ট দিয়ে দলকে সাহায্য করতে চায়, তখন তার ইফোর্টের ব্যাপারে তাকে পজিটিভ ফিডব্যাক দিন। সহকর্মীকে জানান যে সে ভালো কাজ করছে, এতে সেও তার কাজে মোটিভেটেড হবে।
৬) একে অন্যকে সাপোর্ট করুন
কর্মক্ষেত্র মানেই ব্যস্ততা। সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এর মানে এই নয় যে আপনি কারও খোঁজ নিবেন না, কে কীভাবে কাজ করছে জানবেন না। একজন লিডার হিসেবে আপনাকে জানতে হবে আপনি সবার সম্পর্কে কতটুকু ভালোভাবে জানলে তাদেরকে কাজের প্রতি উৎসাহিত করতে পারবেন। যে যেই কাজই করুক না কেন, অবশ্যই তার সম্পর্কে খোঁজ নিন, পজিটিভ কথা বলুন, যদি কেউ কাজে স্ট্রাগল করে তবে তাকে পরামর্শ দিন। আপনার টিমের বাকিরাও যেন একই কাজ করে, সেজন্যও সবাইকে উদ্বুদ্ধ করুন। বিশেষ করে যখন কোনো একজন ব্যক্তির সাপোর্টের দরকার হবে, তখন পুরো টিমকে বলুন তাকে সাপোর্ট করার জন্য।
৭) সঠিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিন
আপনি যখন দুর্দান্ত একটি টিম চাইবেন, তখন অবশ্যই নিয়োগের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। এমন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিন যার ইউনিক স্কিল আছে, কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং দিকদর্শনও অন্যদের থেকে আলাদা। তাই নিয়োগের সময় যে ব্যাপারগুলোতে খেয়াল রাখতে হবেঃ
- দলের কাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ দক্ষতা রয়েছে এমন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে হবে
- অর্গানাইজেশনের সাথে মিল রেখে প্রার্থী কতটুকু কালচারালি ফিট হবে সেটা বুঝুন
- চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসে এমন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে ভয় পাবেন না
৮) গ্রোথ ও ডেভেলপমেন্টের জন্য সুযোগ করে দিন
যদি হাই-পারফরমিং একটি টিম চান, তাহলে টিম মেম্বারদের প্রফেশনাল গ্রোথ ও ডেভেলপমেন্টে ইনভেস্ট করাও জরুরি। এজন্য যে যে কাজ করতে পারেন-
- টিমের সাথে অ্যালাইন করে এবং অর্গানাইজেশনের প্রয়োজন অনুযায়ী মেম্বারদের জন্য ট্রেনিং ও ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম অফার করুন
- বিভিন্ন কনফারেন্স, ওয়ার্কশপ, অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে টিম মেম্বারদের নতুন নতুন স্কিল শেখার এবং জানার সুযোগ করে দিন। সেই সাথে নিয়মিত রেগুলার পারফরম্যান্স ফিডব্যাকও নিন।
৯) ডিফারেন্ট পারসোনালিটির লোক নিয়োগ দিন
কর্মক্ষেত্রে সাকসেসফুল টিম তৈরির জন্য আরও একটি দারুণ পরামর্শ হচ্ছে দলে ইন্ট্রোভার্ট ও এক্সট্রোভার্ট দুই ধরনের লোকই নিয়োগ দেয়া। এতে আপনার টিম ব্যালেন্সড থাকবে। একইসাথে আপনি অ্যানালিটিক্যাল ও ক্রিয়েটিভ থিংকারস পেয়ে যাবেন। ভিন্ন ভিন্ন চিন্তাধারা শেয়ার হবে, একেকজন একেক প্রজেক্টে কাজ করতে পারবে। প্রত্যেকেরই নিজস্ব কিছু দর্শন থাকে যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে এবং এ কারণে সমস্যা সমাধানের ধরনও আলাদা হয়।
১০) সেলিব্রেট করুন ও রিওয়ার্ড দিন
দলগতভাবে কাজ করলে সবারই তাতে অংশগ্রহণ থাকে। তাই ভুল হলেও যেমন দোষ কমবেশি সবার থাকে, তেমনি ভালো করলেও এর ক্রেডিট সবাই পায়। তাই কাজ ভালো হলে সবার মধ্যে উৎসাহ বাড়ানোর জন্য সেলিব্রেট করুন বা রিওয়ার্ডের ব্যবস্থা রাখুন। বিশেষ করে যদি ব্যক্তি হিসেবে কাউকে সম্মান জানাতে হয় সেটা অবশ্যই করতে হবে। এতে সবাই মোটিভেট হবে এবং কাজের প্রতি আগ্রহ থাকবে।
১১) লক্ষ্য সেট করে দিন
দলের প্রত্যেক সদস্যের জন্য লক্ষ্য সেট করে দিন। সর্বোপরি যদিও সেটা দলের লক্ষ্যই হবে। তাদেরকে বুঝিয়ে বলুন টিমওয়ার্ক কী এবং কীভাবে সবাই মিলে কাজ করতে হয়। লক্ষ্য অর্জন হয়ে গেলেও খেয়াল রাখুন কেউ অতিরিক্ত অহমিকা দেখাচ্ছে কিনা। এমন হলে অবশ্যই তার সাথে আলাদা করে কথা বলুন। খেয়াল রাখুন বাকিদের মাঝেও যেন এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি না হয়। প্রত্যেকেরই যে পারসোনাল গ্রোথের সুযোগ রয়েছে সেটা বুঝিয়ে বলুন সবাইকেই।
গ্রেট টিম কীভাবে তৈরি হয়?
একটি টিম গ্রেট হয়ে ওঠার জন্য কয়েকটি বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন। সেগুলো হচ্ছে-
ভালো বন্ডিংঃ সহকর্মীরা সবাই মিলে তখনই ভালো টিম হয়ে ওঠে যখন সবাই মিলে একসাথে আনন্দ করতে পারে। একে অন্যকে কাজে মোটিভেট করে। ঠিক এমনভাবেই নিজেদের মধ্যে বন্ডিং গড়ে ওঠে যেটা আপনাকে অন্যদের বুঝতে সাহায্য করে।
কোলাবোরেশনঃ ইফেক্টিভ টিম তখনই গড়ে ওঠে যখন সবাই একসাথে কাজ করে, প্রত্যেক মেম্বার তাদের স্ট্রেন্থ সম্পর্কে জানে এবং সমস্যা সমাধানে সেগুলোকে খুব ভালোভাবে ইউজ করে। এতে যে কোনো সমস্যার ইনোভেটিভ সল্যুশনের জন্য আপনি সহজেই কাউকে না কাউকে বেছে নিতে পারবেন।
কমিউনিকেশনঃ অন্যকে বোঝা এবং তাদের কথা শোনা যে কোনো ভালো টিমের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এতে কমিউনিকেশন ভালো হয়। প্রত্যেকের কাছেই তাদের চিন্তাভাবনা ও মতামতের গুরুত্ব আছে। কমিউনিকেশন ভালো থাকলে কনফিউশন ও ফ্রাস্ট্রেশন এড়িয়ে চলা সহজ হয়।
অহংকার থাকে নাঃ একা একা কোনোকিছু অর্জন করার চেয়ে সবাই মিলে করলে সেই দলটা বেশি ইফেক্টিভ হয়। আর বন্ডিং ভালো থাকলে দলের সবাই চায় বাকিরাও সামনে এগিয়ে যাক। সবাই বুঝতে পারে, একজন যদি লক্ষ্য অর্জন ক্রতে পারে তাহলে প্রতিষ্ঠানেরও বেনিফিট হবে।
সাপোর্টঃ গ্রেট টিম মেম্বার মানেই একে অন্যকে যে কোনো চ্যালেঞ্জিং টাইমে সাপোর্ট করা। নতুন কোনো কাজের দায়িত্ব নেয়া হোক বা কারও সাথে কথা বলা হোক, দলের সবাইকে সমানভাবে সাপোর্ট করা জরুরি।
কর্মক্ষেত্রে সাকসেসফুল টিম তৈরির জন্য কী কী স্টেপ ফলো করা যেতে পারে তারই কিছু পরামর্শ জানালাম। আশা করি আর্টিকেলটি হেল্পফুল ছিল। আপনি লিডার হন বা যে কোনো দলের সদস্য, এই পরামর্শগুলো কাজে লাগাতে পারলে অবশ্যই সামনে এগিয়ে যাবেন।