কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের মোটিভেট করে কাজে আগ্রহ বাড়াবেন কীভাবে?

একটি কোম্পানিতে যখন কোনো কর্মী কাজ করে, তখন তাদের উদ্দেশ্যই থাকে কাজ ভালো করে করা যেন দিনশেষে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হয়। কিন্তু সব সময় কি সেটা সম্ভব হয়? প্রায়ই কর্মীরা তাদের কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। যার কারণে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হয় না। কোম্পানির সফলতার জন্য কর্মীদের মোটিভেশন টেকনিক বেশ জরুরি একটি পদক্ষেপ। আপনি যখন জানবেন কীভাবে কর্মীদের মোটিভেট করবেন, তখন তাদের কাছ থেকে অবশ্যই ভালো রেজাল্ট বের করে আনতে পারবেন। মোটিভেটেড ইমপ্লয়িরা কঠোর পরিশ্রম করে এবং কোম্পানির মিশনে নিজেদেরকে ডেডিকেট করে দেয়। এর সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে, হাসিখুশি কর্মীরা বেশি প্রোডাক্টিভ হয় এবং অন্য কোথাও চাকরি না খুঁজে একই কোম্পানিতেই অনেকদিন রয়ে যায়। বিজনেস কীসের, সেটা জরুরি নয়। বরং প্রাইভেট বা পাবলিক সেক্টরে ইমপ্লয়ি মোটিভেশন থাকাটা খুব জরুরি। কিন্তু কীভাবে এটি করা যায়? চলুন তাহলে আজ জেনে নেয়া যাক কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের মোটিভেট করে কীভাবে কাজে আগ্রহ বাড়ানো যায়।

কত ধরনের মোটিভেশন হয়?

কোনো কর্মী যদি কাজে আগ্রহ না পায়, তাহলে লিডার হিসেবে আপনার শুরুতেই তার প্রতি হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। সবার প্রথমে আপনাকে বুঝতে হবে তিনি কী কী সমস্যা ফেইস করছেন। ইনফরমাল কথাবার্তা বলে বোঝার চেষ্টা করুন কেন হার্ডওয়ার্কিং এই ব্যক্তিটি কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। সমস্যা খুঁজে বের করতে পারলে সমাধান বের করাটাও সহজ হবে।

আপনাকে যে যে বিষয়ে এ জন্য কাজ করতে হবে-

  • কর্মীদের মোটিভেট করার উপায় জানতে হবে
  • তাদের গুরুত্ব দিতে হবে
  • চ্যালেঞ্জিং রোল নিয়ে কীভাবে কাজ করতে হয় শেখাতে হবে

ইমপ্লয়ি মোটিভেশন সাধারণত দুই ধরনের হয়।

কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের মোটিভেশন কীভাবে বাড়ানো যায়?

ইনট্রিনসিক- পারসোনাল চ্যালেঞ্জ, জব স্যাটিসফেকশন, সেলফ ফুলফিলমেন্ট

এক্সট্রিনসিক- ফিজিক্যাল রিওয়ার্ড, স্যালারি, বোনাস, গিফট

ইমপ্লয়ারকেই বুঝতে হবে তার কর্মী কিসে মোটিভেট হয় এবং মোটিভেশন পাওয়ার সকল সুযোগ যেন তৈরি থাকে। এই কাজটা করার বেশ কিছু উপায় রয়েছে। চলুন তাহলে এবার এই বিষয়গুলো জানা যাক।

কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের মোটিভেট করা যায় কীভাবে?

১) প্রতিষ্ঠানকে আনন্দের জায়গা বানান

ঘন্টার পর ঘন্টা কোনো বোরিং জায়গায় কেউই কাজ করতে চায় না। আনন্দদায়ক, পরিচ্ছন্ন ও আলোকিত জায়গায় কাজ করতে বেশি ভালো লাগে। এজন্য প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে প্রতিটি জিনিস ঠিক জায়গায় আছে কিনা। অফিসিয়াল কাজ করার জন্য কম্পিউটার থেকে শুরু করে সব কিছু এমন জায়গায় রাখতে হবে যেন ব্যবহার করা সহজ হয়। সেই সাথে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাও জরুরি। জিনিসপত্র জায়গামত গুছিয়ে রাখা মানেই যে দামি জিনিস ব্যবহার করতে হবে তা নয়। মাঝেমধ্যে কর্মীদের জন্য ছোট ছোট গিফট কিনতে পারেন। এতে তারা কাজ করেও বেশ মজা পাবে।

২) সাপোর্টিভ ম্যানেজার হোন

ভাবছেন, কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের মোটিভেট করার জন্য সাপোর্টিং ম্যানেজার কেন হতে হবে? এর কারণ হচ্ছে ম্যানেজমেন্ট যদি খারাপ হয়, তাহলে কর্মীদের অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়। কাজ করার সময় রেসপেক্ট, অনেস্টি, সাপোর্ট ও ক্লিয়ার কমিউনিকেশন এখানে ফাউন্ডেশন হিসেবে কাজ করে। আর এই ব্যাপারগুলোই যদি আপনার মাঝে থাকে তাহলে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন একজন চমৎকার লিডার ও মেন্টর। আপনি যদি এই ম্যানেজমেন্টে নতুন হয়ে থাকেন, তাহলে কিছু বিষয় নিয়ে বই পড়তে পারেন। যেমন- ইফেক্টিভ ম্যানেজমেন্ট, বিভিন্ন ধরনের স্কিল সম্পর্কে জানা ও প্র্যাকটিস করা।

কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের মোটিভেশন

৩) ইমপ্লয়ি রিওয়ার্ড অফার করুন

লোকেরা আপনার কাজ করবে যদি কোনো কারণ থাকে। আর এজন্য কর্মীদের মোটিভেটেড রাখা জরুরি। প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের যেভাবে রিওয়ার্ড দিয়ে খুশি রাখতে পারেন-

  • একটি কোয়ার্টারলি বোনাস
  • প্রাইভেট হেলথকেয়ার
  • কোম্পানির প্রফিট শেয়ার করা

কর্মীরা যদি দেখে এসব রিওয়ার্ড নিয়মিত দেয়া হচ্ছে, তাহলে তারা আরও ভালো কাজ করবে এবং কোম্পানির সাথে থাকবে আরও নতুন নতুন রিওয়ার্ড পাওয়ার জন্য।

৪) মডার্ন ওয়ার্ক এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপ করুন

ওয়ার্ক এনভায়রনমেন্ট অন্যতম একটি ক্রিটিক্যাল মোটিভেশন স্ট্র্যাটেজি। পুরনো ধাঁচের কোনো অফিসের চেয়ে একটি মডার্ন অফিসে সুযোগ সুবিধাও বেশি থাকে। যেমন- যেখানে কাজ করা হচ্ছে সেখানে যেন ন্যাচারাল আলো থাকে, কমফোর্টেবল টেম্পারেচার থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কর্মীদের এমন জায়গা প্রয়োজন যেখানে তারা আনন্দ করা, খাবার খাওয়া, গেইম খেলা বা কথাবার্তা বলতে পারবে। অফিস যদি রি-ডিজাইন করতে চান তাহলে কর্মীদের কাছ থেকেও পরামর্শ নিতে পারেন।

৫) ট্রান্সপারেন্ট ও ক্লিয়ার কমিউনিকেশন প্রোভাইড করা

কমিউনিকেশন যদি ক্লিয়ার থাকে তাহলে আউটকামও পজিটিভ আসে। কর্মীরা যখন জানে তাদের দায়িত্ব নিয়ে ঠিক কী কি কাজ করতে হবে তখন তারা মোটিভেটেড হতে থাকে। কোম্পানিতে থাকা শীর্ষ ব্যক্তিদের জানতে হবে এ কাজগুলো কীভাবে করা যায়। যে কাজগুলো এক্ষেত্রে করা যায়-

  • প্রজেক্ট শিডিউল ও ব্রিফ করা
  • টেকনিক্যাল ডাটা সরবরাহ করা
  • মার্কেটিং ম্যাটারিয়াল সরবরাহ করা
  • ইমপ্লয়ি হ্যান্ডবুক দেয়া
  • প্রোডাক্টের ইনফরমেশন দেয়া
  • ইন্টারনাল নিউজ জানানো

Clear Communication, Arfatun Nabila

৬) টিমওয়ার্কে উৎসাহিত করা

কর্মীদের মোটিভেশন বাড়ানোর জন্য টিমওয়ার্ক করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবাই মিলে একসাথে কাজ করলে প্রত্যেকেই নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভাবে এবং যে কোনো লক্ষ্য পূরণে সচেষ্ট থাকে। এর মানে হচ্ছে আপনি কলিগদের সাথে আইডিয়া শেয়ার করা এবং সমস্যা সমাধান করতে পারেন। এই একটি ব্যাপার আপনাকে যে কোনো ম্যাসেঞ্জার চ্যাট, ভার্চুয়াল প্লেস এমনকি ফেইস টু ফেইস কথা বলার চেয়েও বেশি সুবিধা দিবে।

৭) পজিটিভ ফিডব্যাক শেয়ার করুন

কোনো কাজ ভালোভাবে করতে পারলে তার মতো আনন্দ আর হয় না। অর্থাৎ স্যাটিসফেকশনের অন্যতম চাবিকাঠি এটা। স্যাটিসফেকশন নানাভাবে নানাদিক থেকে আসতে পারে। আপনি যদি কারও সেলফ কনফিডেন্স বুস্ট করতেও সাহায্য করেন সেটাও এক ধরনের স্যাটিসফেকশন। আবার যদি কোনো কাস্টমার প্রশংসা করে, তবে সেটা অবশ্যই আপনার ইমপ্লয়ির সাথে শেয়ার করুন। এতে তার মোটিভেশন বাড়বে।

৮) ফ্লেক্সিবল শিডিউল করতে পারেন

বিজনেস অপারেট করার জন্য টেকনোলজি এখন অনেক বদলে গিয়েছে। বিশেষ করে আমাদের কাজের ধরন। বিগত কয়েক বছরে এটা কমবেশি আমরা সবাই দেখেছি। এতে যেমন কাজও হয়েছে, তেমনি কর্মীরাও কাজে ফ্লেক্সিবিলিটি পেয়েছে। আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের মোটিভেট করার জন্য এই ফ্লেক্সিবিলিটি ধরে রাখতে পারেন। আপনি যদি তাদের ওয়ার্ক ফ্রম হমের সুযোগ দেন বা তাদের সুবিধামতো কাজের সুযোগ করে দেন, তাহলে টপ ট্যালেন্টেডদের আকর্ষণ ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন শিডিউলিং অপশন রাখতে পারেন।

৯) ওয়ার্কপ্লেসে খাবারের অপশন রাখা

খাবার কি কর্মী ধরে রাখতে সাহায্য করে? হতে পারে। কারণ কেউ যদি ক্ষুধার্ত থাকে, তাহলে তার কাজ করতে ভালো লাগবে না এটাই স্বাভাবিক। সকালের নাস্তা অথবা সন্ধ্যার খাবার যে কোনোটাই কর্মীদের এনার্জি ও মুড চাঙ্গা করতে পারে। দিনভর তাদের আরও প্রোডাক্টিভ করে তুলতে পারে। গবেষণাতে তো আরও বলে যে, অফিসে যদি খাবার দেয়া হয় তাহলে কর্মীদের খুশি বেড়ে যায় ১১%। যে সব অফিসে দুপুররে খাবার ও বিকালের নাস্তা দেয়া হয়, সেসব অফিসকে অন্তত ৬০% কর্মী পছন্দের তালিকায় রাখে। অনেক অফিসেই খাবার গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা রাখে।

কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের মোটিভেট করতে খাবার

১০) কাজের প্রশংসা করা

কখনো কখনো কর্মীরা চায় তাদের কাজ প্রশংসা পাক। কোনো কর্মী যদি নির্দিষ্ট একটি প্রজেক্টে অনেকটা সময় দেয় অথবা সাহায্যের জন্য কলিগের কাছে আসে, তখন তাদের প্রশংসা করতে ভুলবেন না। এটা শুধুই একটি প্রশংসা নয়, এটা একটি দায়িত্বও। ব্যক্তি যদি বুঝতে পারে তার কাজের প্রশংসা করা হচ্ছে, তাহলে তারাও আরও পরিশ্রম করার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠবে।

প্রতিষ্ঠানগুলো যদি নিয়মিত রিওয়ার্ড ও রিকগনিশনের ব্যবস্থা করে, তবে ১৪% ইমপ্লয়ি এংগেজমেন্ট, প্রোডাক্টিভিটি ও কাস্টমার সার্ভিস বাড়বে, ৩১% ইমপ্লয়ি টার্নওভার কমবে। যদি মিটিং এ তাদের অবদান সম্পর্কে জানানো সম্ভব নাও হয়, তবু একটি স্টাফ ই-মেইলে বা ব্যক্তিগতভাবেও তাদের প্রশংসা করুন। এতে অন্তত তারা বুঝবে তাদের পরিশ্রম প্রশংসা পাচ্ছে।

চমৎকার কর্মী থাকলে যে কোনো কোম্পানি মার্কেটে ভালো করে। কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের মোটিভেট করে রাখলে প্রতিষ্ঠানের যে কোনো কঠিন সময়েই তারা পাশে থাকে। তাদেরকে দীর্ঘদিন পাশে পাওয়া যায় এবং বিজনেস করাটাও আরও আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *