আপনি যখন কারও সাথে কথা বলেন তখন দুটো ব্যাপার ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এক, যদি তাকে আপনি পছন্দ করেন বা সম্মান করেন তাহলে তার সাথে খুব সুন্দর করে কথা বলবেন। দুই, পছন্দ না হলে অল্প কথা বলেন বা অ্যাভয়েড করেন। অথচ আমরা সবাই চাই বাকিরা আমাদের সাথে সুন্দর করে কথা বলুক। কিন্তু সব সময় কি তাই হয়? আপনাকে যদি কেউ পছন্দ না করে তাহলে আপনার সাথে সে কথা বলতে আগ্রহী হবে না। তাই অন্যের থেকে সম্মান পাওয়ার জন্য কিছু আচরণ নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে। সেগুলো কী? আজ জানাবো এ বিষয়েই।
সম্মান পাওয়ার জন্য যে আচরণ নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে
রেসপেক্ট পাওয়ার অধিকার সবার আছে। এটি এমন একটি বিষয়ে যেটা আগে নিজেকে ধারণ করতে হয়, তবেই অন্যরা গুরুত্ব দেয়। চলুন তাহলে জেনে নেই সম্মান পাওয়ার জন্য কী কী করতে হবে-
১) বডি ল্যাঙ্গুয়েজ প্রকাশে কনফিডেন্ট থাকুন
যাদেরকে আপনি সম্মান করেন, তাদের প্রতি ভালোভাবে খেয়াল করুন। অবজার্ভ করুন তাদের কোন বিষয়গুলো আপনাকে আকৃষ্ট করে। তারা যখন হাঁটে, তখন তাদের কনফিডেন্স বা অঙ্গভঙ্গি কেমন থাকে? যদি অন্যের থেকে সম্মান পেতে চান, তাহলে সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং কনফিডেন্সের সাথে কথা বলুন। নিজের চলাফেরা ও অঙ্গভঙ্গির উপর কাজ করুন। যদি কী করতে হবে বুঝতে না পারেন, তাহলে এ সম্পর্কিত ভিডিও দেখতে পারেন।
২) স্পষ্টভাবে কথা বলুন
অন্যের থেকে সম্মান পাওয়ার জন্য আপনি কীভাবে কথা বলছেন সেটা খুবই ইম্পরট্যান্ট। অনেকে এত দ্রুত কথা বলেন যে, কী বলেন স্পষ্টভাবে বোঝাই যায় না। আবার কেউ কেউ আছেন ‘ইউ নো’ ‘লাইক’ ‘তারপর বুঝছ’ – এই ধরনের ওয়ার্ড বারবার বলতে থাকেন। আবার কারও কারও কথা খুবই এগ্রেসিভ হয় বা কথার মাঝে বেশ বসি (Bossy) একটা ভাব থাকে। এতে যিনি কথা শোনেন, তিনি খুবই বিরক্ত হন। অন্যের সাথে কথা বলার সময় নিজে কী বলছেন সেদিকে খুব ভালোভাবে মনোযোগ দিন, যেন সামনে যে আছে, সে মন দিয়ে কথা শোনে। কথা বলার সময় না তোতলিয়ে, ভয় না পেয়ে, অবান্তর পয়েন্ট না তুলে স্পষ্ট ভাষায় বলুন।
৩) কখনো গসিপের অংশ হবেন না
এমন একজন মানুষের কথা চিন্তা করুন তো, যে কিনা সব সময় সবার পিঠপিছে কথা বলে। সেই ব্যক্তিকে আপনি কতটুকু সম্মান করবেন? এবার সেই জায়গায় নিজেকে দাঁড় করিয়ে দেখুন। আপনিও যদি সবার পিঠপিছে কথা বলতে থাকেন, আপনাকেও কেউ সম্মান করবে না। অন্যের বদনাম করা থেকে তাই দূরে থাকুন, নইলে আপনারই ইমপ্রেশন খারাপ হবে। তাছাড়া যে গুরুত্বপূর্ণ সময়টুকু অন্যের বদনামের জন্য ব্যয় করা হয়, সেটুকু ভালো কাজে ব্যয় করলে নিজেকে আপগ্রেড করা হয়।
৪) কাজ সম্পর্কিত তথ্য জানুন
ধরুন, গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিক নিয়ে কথা হচ্ছে। এর মধ্যে একজন এমনভাবে কথা বলা শুরু করলো যেন সে সব জানে। অথচ তার বেশিরভাগ কথাই ভিত্তিহীন, রেফারেন্স ছাড়া। এমন কথা শুনতে নিশ্চয়ই আপনার খুব বিরক্ত লাগবে, তাই না? তাহলে ভাবুন, আপনিও যদি এমন কথা বলা শুরু করেন, তাহলে কি অন্য কেউ আপনাকে রেসপেক্ট করবে? সম্মান পাওয়ার জন্য কথা এমনভাবে বলতে হবে যেন সেগুলোর জোর থাকে। যে বিষয়ে আপনি কাজ করছেন, সেগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। যতটুকু সম্ভব ইনফরফেশন কালেক্ট করুন। এতে আপনি যে কথাগুলো বলবেন, সেগুলোর জোর তো থাকবেই, বাকিরাও মন দিয়ে শুনবে।
৫) ইমোশন কন্ট্রোল করা শিখুন
আপনি কি কথায় কথায় রেগে যান? কেউ কোনো কিছু বললে সেটা ভালোভাবে না শুনেই অপিনিয়ন দিয়ে ফেলেন? এতে কিন্তু সহজেই আপনি রেসপেক্ট হারিয়ে ফেলবেন! তাই ইমোশনকে কন্ট্রোল করা খুব জরুরি। ঠিক এমনিভাবে যদি আপনাকে কিছু বললে আপনি ইমোশনাল হয়ে যান বা মন খারাপ করে ফেলেন, এটাও সমস্যা। এতে কাজের উপর বেশ বাজে ইমপ্যাক্ট পড়ে। তাই সম্মান পাওয়ার জন্য ইমোশন কন্ট্রোল করতে পারাও জরুরি।
৬) কথা দিয়ে কথা রাখুন
আপনাকে একজন কথা দিয়ে বলল, সে কাজটা সময়মত করে দিবে। কিন্তু কাজ সময়মত তো হলোই না, বরং জরুরি সময়ে সে আপনার ফোনটাই রিসিভ করল না। তাকে কি আর আপনি কখনো কোনো কাজ দিবেন? নাকি তার সাথে যোগাযোগ করতে ইচ্ছা করবে? ঠিক একই ঘটনা যদি আপনি ঘটান, তাহলে আপনার প্রতি বিশ্বাস উঠে যাবে। সম্পর্কে নষ্ট হতে এক মুহূর্ত সময় লাগবে না। তাই সম্মান পাওয়ার জন্য যে প্রমিস আপনি করেছেন, সেটা অবশ্যই ফুলফিল করতে হবে।
৭) কাজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করুন
কাজ করলে তাকে নিয়ে কথা অবশ্যই হবে। তাই বলে ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলে চলবে না। আপনার নিজেকে প্রমাণ করতে হবে কাজ দিয়ে। আপনি কতটুকু পারফেক্ট, সেটা কাজ দিয়ে প্রমাণ করুন। শুধু ডেডলাইনের মধ্যে কাজ জমা দেয়া নয়, চেষ্টা করুন অন্যদের চেয়েও ভালো কাজ করতে।
৮) অন্যকে সাহায্য করুন
কর্মক্ষেত্র এমন এক জায়গা যেখানে সবাই সব শিখে আসে না। একজন কলিগের অন্যের সাহায্য অবশ্যই দরকার হয়। আপনি নিজেও যেমন হার্ড টাইম ফেস করেন মাঝে মাঝে, তেমন অন্য কেউও করে। তাই আপনার কাছে যদি কেউ হেল্প চাইতে আসে, আর সে কাজটি যদি আপনার জানা থাকে, কখনোই তাকে ফিরিয়ে দেবেন না। আজ যদি আপনি ছোট্ট কোনো ভালো কাজ করেন, কোনো না কোনোভাবে সেটা পুরস্কার হয়ে আপনার কাছে ফিরে আসবেই। ঠিক একইভাবে যদি আপনার মনে হয় কারও সাহায্য প্রয়োজন, সেটা চাইতে কখনোই পিছপা হবেন না।
৯) ভুল স্বীকার করুন
প্রতিষ্ঠানে যে পজিশনেই আপনি থাকুন না কেন, ভুল আপনার হতেই পারে। এর মানে এই নয় যে, নিজের ভুল অন্যের উপর চাপিয়ে দেবেন। মানুষ ভুল থেকেই শেখে। আর একবার ভুল হয়ে গেলে সেটা নিয়ে বাহানা দেয়ার কিছু নেই। ভুল স্বীকার করলে আপনি ছোট হয়ে যাবেন না।
১০) নিজের বাউন্ডারি সেট করে দিন
আপনি যতই ভালো হন না কেন, বেশি সুবিধা দিলে সবাই আপনার ফায়দা নিতে চাইবে। তাই আপনি যদি নিজেই নিজের বাউন্ডারি সেট না করে দেন, তাহলে পদে পদে অসম্মানিত হতে হবে আপনাকে। সব সময় অন্যকে নিরাশ করে নিজের জন্য স্ট্যান্ড নেয়া বেশ কঠিন। মাঝে মাঝে মনে হতে পারে, ‘এটা এমন কোনো বিষয় না। ও যেহেতু করেই ফেলেছে, কী আর করা। এইবার কিছু বলবো না, পরেরবার বলব।’ ঠিক এই জায়গাতে এসেই শুরু হয় কনফ্লিক্ট। না তো আপনি সহ্য করতে পারছেন, না তো কিছু বলতে পারছেন। তাই আপনার কোনটা পছন্দ বা পছন্দ নয়, কীসে আপনি ভালো থাকেন, কোন ব্যাপারটা মেনে নিতে আপনার কষ্ট হয় – এই বাউন্ডারিগুলো সেট করা জরুরি। এতে অন্যরাও আপনাকে সহজে ম্যানিউপুলেট করতে পারবে না। আপনাকে অসম্মানিত করতে পারবে না।
সম্মান পাওয়ার জন্য আমরা কতকিছুই না করি। কখনো কখনো লিমিট ক্রস করে যাই। কিন্তু এতে যে সম্মান পাওয়ার বদলে সম্মানের হানি হয় সেটা অনেকেই বুঝে উঠতে পারি না। এজন্য রেসপেক্ট পেতে হলে সবার আগে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে সঠিকভাবে, কিছু আচরণ নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে। সেই সাথে মনে রাখবেন, আপনি নিজেও যেমন রেসপেক্ট পেতে চান, অন্যরাও রেসপেক্ট ডিজার্ভ করে। তাই অন্যকেও সম্মান করতে হবে একইভাবে। তবেই না আপনি সবার মাঝে অনন্য একজন হয়ে উঠতে পারবেন।