রিমোট ওয়ার্কই কি কর্পোরেটের ভবিষ্যৎ?

বর্তমানে আমরা প্রায় সবাই রিমোট ওয়ার্ক অথবা ওয়ার্ক ফ্রম হোম কথাটির সাথে বেশ ভালোভাবেই পরিচিত। সম্প্রতি কোভিড ১৯ মহামারীর সময় থেকেই রিমোট ওয়ার্ক বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে ধীরে ধীরে এটি কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে স্থায়ীভাবে থেকে যেতে পারে।

রিমোট ওয়ার্ক বলতে আমরা কি বুঝি?

কর্মক্ষেত্র বা অফিস যেটাই হোক, চাকরি বলতেই আমরা বুঝি বাসার বাইরে অন্য কোথাও গিয়ে কাজ। মূলত চিরাচরিত অফিসের এই ধারণাটাকেই ভেঙে দিচ্ছে রিমোট ওয়ার্ক অথবা হোম অফিস। মূলত কোভিড নাইন্টিন মহামারীর সময়ে বাধ্যতামূলকভাবে সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরকম অবস্থায় যার যার অবস্থান থেকে কাজের গতি এগিয়ে নিতেই মূলত  রিমোট ওয়ার্কের প্রচলন। গুগল মিট, ক্লাসরুম, স্কাইপসহ দূরবর্তী যোগাযোগের বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে মূলত রিমোট ওয়ার্ক চালু রাখা হয়। মহামারী শেষ হয়ে গেলেও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকায় রিমোট ওয়ার্ক এর প্রচলন এখনো রয়ে গিয়েছে। 

রিমোট ওয়ার্ক কীভাবে আমাদের কাজকে সহজ করে তুলছে?

মূলত রিমোট ওয়ার্ক এর বিভিন্ন সুবিধা ও সাশ্রয়ের জন্যই এটি জনপ্রিয় হয়েছে এবং বিভিন্ন কোম্পানি এখনো এভাবে কাজ করছে। রিমোট ওয়ার্ক এর বিভিন্ন সুবিধায় কাজের ঝামেলা কমে এবং সময় বাঁচে। 

১. যাতায়াতের সময় অপচয় হয় না

অফিস বলতে এখনো আমাদের মনে প্রতিদিন বিশাল জার্নি করে বাসা থেকে অনেক দূরে যাওয়া আসার কথাই মনে হয়।  কিন্তু রিমোট ওয়ার্ক এর ফলে এই যাতায়াতের কোনো প্রয়োজনই হয় না। বাসা থেকেই ডিভাইস ও টেকনোলজির সাহায্যে অফিসের সব কাজকর্ম করে ফেলা যায়। বড় বড় শহরগুলো, যেমন আমরা যদি রাজধানীর ঢাকার কথাই ধরি, জ্যামের শহর বলেই ঢাকা আমাদের কাছে পরিচিত। বের হয়ে যেকোনো জায়গায় যেতে কমপক্ষে এক দেড় ঘন্টা তো লাগবেই। অনেকেরই অফিসে যাওয়া আসা করতে প্রতিদিন প্রায় তিন থেকে চার ঘন্টা লেগে যায়।  ওয়ার্ক ফ্রম হোমে এই অতিরিক্ত সময়টা বেঁচে যায়। এছাড়া যাতায়াত এবং খাবারের খরচও অনেকটাই কমে আসে।

২. কাজের মান বেড়ে যায়

আমরা যখন প্রতিদিন অনেকটা দূরত্ব পাড়ি দিয়ে অফিসে যাই, আমরা প্রায়ই সেই যাতায়াতের ধাক্কায় ক্লান্ত হয়ে পড়ি। যার ফলে অফিসের কাজে পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া এবং ভালোমতো গুছিয়ে কাজ করা সম্ভব নাও হতে পারে। রিমোট ওয়ার্ক এর ফলে আমরা অফিসের কাজটা বাসায় নিজের পরিচিত পরিবেশে বসেই করতে পারি। গবেষণায় দেখা গেছে যে এদের বাড়িতে অথবা সুবিধাজনক পরিবেশে বসে কাজ করলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায় এবং কাজে একাগ্রতা বাড়ে। সেদিক থেকে অফিসে কাজ করার চাইতে নিজের বাসায় বসে কাজ করাটা আরো বেশি কমফোর্টেবল হয়, এবং কাজের মানও বাড়ে।

৩. ফ্লেক্সিবল ওয়ার্কিং আওয়ার 

অফিসে কাজ করা মানেই সাধারণত অফিসের ঠিক করা নির্দিষ্ট একটা সময়ের মধ্যে কাজ করা। কিন্তু রিমোট ওয়ার্ক এর ক্ষেত্রে আপনার কাজের সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনি নিজের মতো ম্যানেজ করে নিতে পারবেন। রিমোট ওয়ার্কে মূলত নির্দিষ্ট সময়ে কাজ জমা দিতে পারলেই হয়, তাই আপনি আপনার সুবিধামতো সময়ে কাজ গুছিয়ে নিতে পারবেন। এতে আমাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের মধ্যে সুন্দর একটা ব্যালেন্স করে ফেলা যায়। এছাড়াও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রিমোট ওয়ার্ক ডেডলাইন বেসড হওয়ার কারণে, সুবিধামত সময়ে কাজ করা, অথবা আগের দিন বেশি কাজ করে পরের দিনের চাপও কমিয়ে ফেলা যায়। এতে অফিস এমপ্লয়ি দুইজনেরই সুবিধা হয়। 

৪. বেশ কিছু খরচ কমে আসে 

একটা অফিস চালাতে গিয়ে আমরা বুঝতে পারি যে এখানে কত রকমের খরচ থাকে, যার বেশিরভাগটাই নির্ভর করে অফিসের উপরে এবং এমপ্লয়িদের উপস্থিতির উপরে। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি যে একটা অফিসে যদি ৫০ জন রেগুলার এমপ্লয়ি থাকেন, তাহলে এই ৫০ জনের জন্য বেশ বড় স্পেসের একটা অফিস নিতে হয়। তাদের জন্য সেভাবে অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে হয়, মিটিং এর ব্যবস্থা করতেও এক্সট্রা খরচ করতে হয়। এছাড়াও আছে বিদ্যুৎ বিল, ক্যান্টিনের খরচ এবং সার্ভিসিং এর খরচ।  এমনকি অফিসের স্টেশনারির মতো ছোটখাটো বিষয়েও বেশ খরচ হয়ে যায়। কিন্তু একই জায়গায় যদি পনেরো বিশ জন রেগুলার এমপ্লয়ি এবং বাকিরা সবাই ওয়ার্ক ফ্রম হোম করেন, সে ক্ষেত্রে অফিস স্পেসের খরচ, মিটিং এর খরচ, তাদের জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থার খরচ সবই কমে আসে। বিদ্যুৎ বিল এবং ইন্টারনেট বিলও বেশ অনেকটাই কমে যায়। সুতরাং এদিক দিয়ে ভাবতে গেলে রিমোট ওয়ার্কে অনেকটাই সাশ্রয় হয়।

৫. এমপ্লয়িদের পার্সোনাল স্কিল ও এফিশিয়েন্সি বাড়ে

এখনকার দুনিয়ায় যে কোনো কাজেই পার্সোনাল স্কেল ও এফিশিয়েন্সির গুরুত্ব কেমন তা আমরা সবাই জানি। একজন দক্ষ কর্মী আপনার কোম্পানির জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন, একই সাথে তার নিজেরও স্কিল বাড়ে এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। রিমোট ওয়ার্কে যাতায়াত সহ বেশ অনেকটা সময় বেঁচে যায়। এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কোনো একটা স্কিল শেখা যায়, অথবা আগেরই জানা কোনো স্কিলে দক্ষতা বাড়ানো যায়, যা পরবর্তীতে কাজে লাগবে। এছাড়াও রিমোট ওয়ার্কে প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন প্রযুক্তির ব্যবহার থাকে। বিভিন্ন ডিজিটাল টুল, অ্যাপ ও সফটওয়্যার ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি পেতে থাকে, যা ভবিষ্যতে কাজে লাগে। 

৬. দূরত্বের কোনো বাধা থাকে না 

আমরা সাধারণত চাকরি খোঁজা বা অফিস করার ক্ষেত্রে নিজের এলাকার আশেপাশেই কিছু একটা বেছে নেওয়ার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে অনেক সময়ই দূরত্বের কারণে হয়তো আরো ভালো সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। বড় বড় কোম্পানিও অনেক ক্ষেত্রে দূরত্বের কারণে ভালো ও যোগ্য কর্মীদের হারায়। রিমোট ওয়ার্ক বা ওয়ার্ক ফ্রম হোম এর ক্ষেত্রে এই দূরত্বের বাধাটা থাকে না। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো সময়ে কাজ করা এবং রিভিউ করা যায়। এমনকি এক্ষেত্রে শুধু দেশ নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কাজ করা যায়, সীমান্তের বাঁধা ও সীমাবদ্ধতা সেক্ষেত্রে থাকে না। শুধুমাত্র ডিভাইস এবং ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই দূরত্ব এক্ষেত্রে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। এর ফলে কোম্পানিগুলোও দূর থেকেই তাদের যোগ্য কর্মীদের কাজে লাগাতে পারে, দূরত্বের জন্য কারো আর কোনো ভালো সুযোগও হাতছাড়া করতে হয় না। 

৭. শারীরিক সুস্থতা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে 

আমরা প্রায় সবাই জানি যে নিয়মিত কয়েক ঘন্টা ধরে রাস্তাঘাটে থাকা, রাস্তার ধুলাবালি এবং যানবাহনের কালো ধোঁয়ায় অনেকক্ষণ বসে থাকা, দীর্ঘ সময় একটানা বসে কাজ করা, এবং বাইরের নিম্নমানের খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর। তবে নিয়মিত অফিস করতে হলে এসব যেন মেনে নিতেই হয়। শরীরের উপর এই চাপটা কমাতে পারে রিমোট ওয়ার্ক। প্রতিদিন জার্নি করে অফিসে যাওয়ার পরিবর্তে বাসা থেকে কাজ করলে এসব ঝুঁকি অনেকাংশেই এড়ানো যায়। কাজের সময় ফ্লেক্সিবল হওয়ার কারণে নিজের সুবিধামতো ব্রেক নেওয়া যায়, ফলে একটানা বসে কাজ করতে হয় না, আবার ছোটখাটো ব্রেক নিয়ে নিজেকে কিছুটা সময় দিয়ে আরো বেশি মনোযোগের সাথে কাজে বসা যায়।  এছাড়াও ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ফলে শরীরও সুস্থ থাকে। একজন শারীরিকভাবে সুস্থ কর্মী অফিসকে আরো ভালো সার্ভিস দিতে পারেন, এটাতো মেনে নিতেই হবে! 

৮. পরিবেশের জন্যও উপকারী

রিমোট ওয়ার্ক পরিবেশের উন্নতির ক্ষেত্রেও বেশ কিছুটা ভূমিকা রাখে। যখন মানুষ একটা বড় স্কেলে রিমোট ওয়ার্ক বেছে নেয়, তখন রাস্তায় চলাচল কমে আসে। কম যানবাহনের প্রয়োজন হয় ফলে কার্বন নিঃসরণ কমে যায়। এছাড়াও কম বিদ্যুতের ব্যবহার, পলিথিন, কাগজ ও প্লাস্টিক সামগ্রীর সীমিত ব্যবহার এগুলো কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানোর সাথে সাথে পরিবেশ দূষণও কমায়, যা সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট এর ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

কোম্পানিগুলো কীভাবে এর সাথে তাল মিলাতে পারে?

রিমোট ওয়ার্ক প্রথমে টেম্পোরারি সলিউশন হিসেবে এলেও দীর্ঘমেয়াদে এর সুফলগুলো ধীরে ধীরে সবাই বুঝতে পেরেছে। বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সীমিতভাবে এবং পুরোপুরি ভাবে রিমোট ওয়ার্ককে তাদের স্ট্র‍্যাটেজির মধ্যে মিলিয়ে নিয়েছে। আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে রিমোট ওয়ার্ককে সুন্দরভাবে কাজে লাগানো যায়, যাতে কোম্পানি ও কর্মী দুই পক্ষই উপকৃত হবে। এখন আমরা কীভাবে কোম্পানিগুলো বিভিন্নভাবে রিমোট ওয়ার্ক এর সাথে মানিয়ে নিতে পারে এবং এই পরিস্থিতিতে সফল হতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করব। 

১. টেকনোলজির সাহায্য নেয়া

এতক্ষণে আমরা এটা বুঝতে পেরে গেছি যে রিমোট ওয়ার্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে টেকনোলজি। ইন্টারনেট, বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও অ্যাপ্লিকেশন, ওয়েবসাইট ইত্যাদির মাধ্যমে এক জায়গায় না থেকেও সবাই একসাথে কাজ করতে পারে। তাই কোম্পানিগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে কর্মীরা এসব সুযোগ সুবিধা ঠিকভাবে পায় এবং কাজে লাগাতে পারে। যেমন ক্লাউড স্টোরেজ ও ক্লাউড ভিত্তিক টুলস। গুগল ওয়ার্কস্পেস, মিট, ক্লাসরুম, মাইক্রোসফট টিমস, স্ল্যাক এসবের মাধ্যমে দলগতভাবে একসাথে কাজ করা যায়। এছাড়াও নিরাপত্তার দিকটা খেয়াল রাখতে উন্নত মানের সাইবার সিকিউরিটি সিস্টেম ব্যবহার করা জরুরী। ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন, এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন, টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন এসবের সাহায্য নিয়ে নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। কারণ নিরাপত্তা ঠিক না থাকলে কোম্পানির মূল্যবান তথ্য চুরি হয়ে যাওয়া, হ্যাক হয়ে যাওয়া বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে নষ্ট করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যাকে আমরা এআই বলেই বেশি চিনি, কাজের ক্ষেত্রে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন ছোটখাট অটোমেশনের কাজকর্ম এখন এআই দিয়েই করা হয়। কাজের ক্ষেত্রে এখন এ আই মানুষের বিভিন্ন কাজকর্ম সহজ করে দিয়েছে। এ আই এর ব্যবহারে এখন কম গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো এক ক্লিকেই করে ফেলা যায়, এতে যেসব কাজে হিউম্যান এটেনশন দরকার, সেগুলো বাকিরা আরো বেশি এফোর্ট দিয়ে করতে পারেন। 

২. এমপ্লয়িদের জন্য ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা

আমরা জানি যে, রিমোট ওয়ার্ক এর জন্য শুধুমাত্র প্রযুক্তির উন্নয়ন করলেই হবে না, এমপ্লয়িরা যাতে সেই সুবিধাটা কাজে লাগাতে পারেন তার ব্যবস্থাও ঠিকঠাকভাবে করতে হয়। টেকনোলজি আপডেট করার সাথে সাথে যদি এমপ্লয়িদের জন্য প্রোপার ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে এসব টেকনোলজি ব্যবহারে তাদের দক্ষতা বাড়বে এবং সেই দক্ষতাকে তারা কাজের উন্নতিতে ব্যবহার করতে  পারবে। 

এক্ষেত্রে যেকোনো নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করার সাথে সাথে সেটা নিয়ে এমপ্লয়িদের জন্য ট্রেনিং সেশন এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মের ব্যবহার, নতুন কোনো টুলস এলে ঠিকঠাক নিরাপত্তা মেনে তার ব্যবহার শেখানো, ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে প্রাইভেসির খেয়াল রাখা এসব বিষয়ে ট্রেনিং কাজের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে, যাতে মূল উপকার কোম্পানিরই হবে। 

এছাড়াও এসব হার্ড স্কিল ডেভলপমেন্ট এর পাশাপাশি কিছু সফট স্কিল সম্পর্কেও ট্রেনিং দেয়া যেতে পারে। যেমন টাইম ম্যানেজমেন্ট, কমিউনিকেশন, টিমওয়ার্ক এগুলো কর্মীদের মধ্যে কাজের এফিশিয়েন্সি বাড়ায়। 

৩. ওয়ার্কিং আওয়ার ফ্লেক্সিবল করা এবং ব্যালেন্স ঠিক রাখা

রিমোট ওয়ার্কের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এর টাইম শিডিউল। প্রতিদিনকার ৯ টা থেকে ৫ টার বাইরেও বেশ বড় একটা সম্ভাবনা আছে রিমোট ওয়ার্ক এর ক্ষেত্রে। এই সুবিধাটা কাজে লাগিয়ে কোম্পানিগুলো নিজেদের টাইম ম্যানেজমেন্ট ও শিডিউল করতে পারে। ওয়ার্কিং আওয়ার ফ্লেক্সিবল হলে এমপ্লয়িরা নিজেদের সুবিধামতো সময়ে কাজ করতে পারেন। যাতায়াতের ঝামেলা না থাকায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ করে দেয়ার সুযোগ পান। এর ফলে কাজের প্রেসারও কমে যায়, এবং এমপ্লয়িদের মানসিক চাপ কমে। এছাড়াও রিমোট ওয়ার্ক এর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ে ব্রেক অথবা গ্যাপের ব্যাপারটা অফিসিয়ালি নির্ধারণ করা হলে এমপ্লয়িদের কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়বে, বিশ্রাম বা টাইম অফ নেওয়ার ফলে মন সতেজ থাকবে, এবং কাজের প্রতি বিতৃষ্ণা চলে আসবে না। 

৪. কাজের মান নির্ধারণ ও মূল্যায়নে নতুনত্ব আনা

অফিস ওয়ার্ক এর ক্ষেত্রে যেহেতু প্রতিদিন অফিসে বসেই কাজ করা হয়, সেক্ষেত্রে কাজের মান নির্ণায়ন ও মূল্যায়ন সরাসরি করা যায়, কিন্তু রিমোট ওয়ার্ক এর ক্ষেত্রে এ সুবিধাটা পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে টেকনোলজির ব্যবহার ও অন্যান্য টেকনিক কাজে লাগিয়ে নতুনত্ব আনা যেতে পারে।

যেমন- কাজের সময় বিবেচনা না করে কাজের মান দিয়ে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। কাজের মান ও ফলাফল অবশ্যই কাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই, নিয়মিত কাজের মান পরীক্ষা করা, প্রয়োজনে কর্মীদেরকে পরামর্শ ও ফিডব্যাক দেয়া এক্ষেত্রে একটি সফল স্ট্র্যাটেজি হতে পারে। কে পি আই কে এই ক্ষেত্রে গুরুত্বের সাথে উপরে রাখা যায়। ওয়ার্ক ফ্রম হোম এর কে পি আই গুলো অবশ্যই অফিস ওয়ার্ক কে পি আই থেকে ভিন্ন ধরনের হবে, এবং হোম অফিস ফ্রেন্ডলি হিসেবে সেগুলোকে সাজাতে হবে। তাহলেই এমপ্লয়িদের যথাযথ কাজের মান বোঝা যাবে দূর থেকেই।

৫. ডেটা ও ইনফরমেশন এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

দূরবর্তী কাজের ক্ষেত্রে যেহেতু বেশিরভাগ ডেটা এবং ইনফরমেশনে অনলাইনে আদান প্রদান করা হয়, সেক্ষেত্রে ডেটা লিক ও নিরাপত্তার একটা বড় ঝুঁকি থেকে যায়। কোম্পানিগুলোর উচিত হবে এক্ষেত্রে নিচ থেকেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা এবং বিভিন্ন টুলস এর ব্যবহার করা। প্রয়োজনীয় তথ্য নিরাপদ রাখতে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন), ফায়ারওয়াল, এন্টিভাইরাস, বিভিন্ন এনক্রিপশন টুল এগুলো ব্যবহার এবং এ সম্পর্কে কর্মীদের ভালোমতো প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সাইবার সিকিউরিটির বিভিন্ন আইন সম্পর্কে জ্ঞান রাখা, কীভাবে নিরাপদ ভাবে ফাইবার স্পেস ব্যবহার ও ফাইল আদান প্রদান করতে হয় এ সম্পর্কে কর্মীদের ট্রেনিং দেয়া, প্রয়োজনে কোনো থার্ড পার্টি সিকিউরিটি কোম্পানির সাথে চুক্তি করা, কোম্পানির প্রয়োজনীয় গোপনীয়তা রক্ষার্থে এগুলো সবে ভালো কাজ করবে। 

৬. দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং ভবিষ্যতের চিন্তা করা

কোভিড সংক্রমণের সময় থেকেই আমরা বুঝতে পেরেছি যে রিমোর্ট ওয়ার্ক সাময়িক সমাধান নয়, এবং দীর্ঘমেয়াদে আমাদের জীবনের অংশ হতে চলেছে। তাই যে পদক্ষেপ নেয়া হোক না কেন, সেটাকে এমন ভাবে নিতে হবে যাতে বড় পরিসরে এবং দীর্ঘ মেয়াদে সে পরিকল্পনা সফল হয়।

এক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রের হাইব্রিড মডেলকে বেছে নেয়া যায়। যেহেতু সব এমপ্লয়ির একই সাথে অফিসে আসতে হবে না, সেটাকে মাথায় রেখে এমন ভাবে অফিস সাজানো যায়, যাতে দূর থেকে এবং সরাসরি অফিস থেকে একইভাবে কাজ করা যায়। দায়িত্ব এমনভাবে ভাগ করে দিতে হবে যাতে দূর থেকেও সবাই ঠিকমত নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারে। এমপ্লয়িদের কিছু বিশেষ সুযোগ সুবিধা দেয়া যেতে পারে। এছাড়াও সাইবার স্পেসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার এর মেম্বারশিপ কিনে রাখা, ইকো ফ্রেন্ডলি পরিকল্পনা এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আনা এগুলোকেও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় আনা যেতে পারে। 

অবশেষে বলা যায়, যেভাবে রিমোট ওয়ার্ক কর্পোরেট সংস্কৃতের ভবিষ্যৎ হিসেবে এসেছে, সেভাবেই এটিকে কার্যকর ভাবে চালিয়ে নেওয়াও কোম্পানিগুলোর জন্য দীর্ঘ মেয়াদে লাভজনক হবে। এর সবগুলো দিক ভালোভাবে চিন্তা করে দেখলে বোঝা যায় যে এর সুবিধাই বেশি। কোম্পানিগুলো যদি একে মাথায় রেখে তাদের টেকনোলজি, সিকিউরিটি, কাজের মান এবং এমপ্লয়িদের সুযোগ সুবিধার ম্যানেজ করতে পারে, তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের নতুন চ্যানেল মোকাবেলা করার সহজ হবে, এবং সফলতার হার বাড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *